কী হতে পারে মিরপুর টেস্টে! বাংলাদেশ কি নিজেদের মাটিতে ফিরে পাবে নিজেদের? কিন্তু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলো না। টসে জিতে দক্ষিণ অফ্রিকার বিপক্ষে সেই বিবর্ণ টাইগার শিবির। ব্যাট হাতে শুধু আসা-যাওয়া। একটা সময় মনে হচ্ছিল মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই অলআউট হয়ে যাবে। দলীয় স্কোর একশ’ ছুঁতে পারবে কি পারবে না তাই নিয়ে শঙ্কা। তবে লেজের দিকের ব্যাটাররা অনেক কষ্টে তা স্পর্র্শ করলেন। কিন্তু চা বিরতির আগেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ে হলো দু’টি লজ্জার রেকর্ডও। একটি শেষ ৭ ইনিংসের মধ্যে ৬টিতেই ২শ’র নিচে অলআউট হলো টাইগাররা। আরেকটি হলো- ১০৬ রান মিরপুরের মাঠে টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন সংগ্রহ। আগেরটি হলো ২০২১ এ পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৭ রানের। তবে এমন দিনে বাংলাদেশের ত্রাতা হয়ে এলেন তাইজুল ইসলাম। ব্যাটিংয়ে নেমে তার ঘূর্ণী মায়াতে ১৪০ রানে হারালো ৬ উইকেট। সেখানে একাই তিনি নিলেন পাঁচ উইকেট। সেইসঙ্গে এই ম্যাচেই দেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ছুঁয়ে ফেললেন ২শ’ উইকেটের মাইলফলক। ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে বল হাতে তাইজুলের এই রেকর্ডটাই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে প্রথম দিনে দলের অন্যতম সাফল্য বললেও ভুল হবে না। অন্যদিকে স্বাগতিকরা প্রথমদিন শেষে লিড নিয়েছে ৩৪ রানের। আজ সকালে তাদের যতটা তাড়াতাড়ি অলআউট করা যাবে, ততই মঙ্গল। নয়তো লিড বড় হলে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে হতে হবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তবে ব্যাটারদের ব্যর্থতা নিয়ে তাইজুল কোচের উপর দায়টা চাপিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাটাররাদের কী ঘাটতি এটাতো আমি বলতে পারবো না, এটা কোচ বলতে পারবেন।’
গতকাল মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনেই পতন হয়েছে ১৬ উইকেটের। যা রেকর্ড শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের রেকর্ড তবে উইকেট পতনের সংখ্যা দেখে যেমন মনে হয়, ততটা ভয়ঙ্কর পিচ ছিল না। এর চেয়ে বেশি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার ভালো বোলিংও। আর নিজেদের সর্বনাশে অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররাও বেশি বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে এসে। অন্তত পাঁচজন ব্যাটার উইকেট উপহার দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। স্পিন সহায়ক উইকেটের কথা মাথায় রেখে এক পেসার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। পেস বিভাগ একাই সামলাবেন হাসান মাহমুদ। তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে স্পিন বিভাগে নেয়া হয়েছে অফস্পিনার নাঈম হাসানকে। গত বছরের ডিসেম্বরের পর আবার জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামছেন এই অফ স্পিনার। এছাড়াও তিন স্পিনার ও এক পেসারের একাদশে অভিষেক হয় জাকের আলীর। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ১০৫তম ক্রিকেটার তিনি। এছাড়াও একাদশে ফিরানো হয় মাহমুদুল হাসান জয়কে। চোটের কারণে পাকিস্তান সফরের দুই ম্যাচ ও পরে একাদশ সমন্বয় করতে গিয়ে ভারত সফরে খেলা হয়নি তার।
টসে জিতে নাজমুল হোসেন শান্ত আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু তিনি সহ দলের সব ব্যাটারই যেন প্রমাণ করতে নামলেন আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত ভুল হয়েছে। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে প্রথম সেশনে ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬০ রান ২৬.১ ওভার খেলে। তখনো দলের হাল ধরে লড়াই করে যাচ্ছিলেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। ১৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। তবে তাকে সঙ্গ দিতে এসে একে একে ফিরে গেছেন সাদমান ইসলাম ০, মুমিনুল হক ৪, অধিনায়ক শান্ত ৭, লিটন দাস ১, মুশফিকুর রহীম ১১, মেহেদী হাসান মিরাজ ১৩ রানে আউট হন। যেখানে মিরপুরের উইকেট বোলার কমিয়ে ব্যাটার বাড়ানো হয়েছিল। সেখানে দলের ব্যাটিং ভরসারা একে একে ফিরে গেছে বিপদে ফেলে।
এরপর আর ফিরে মাত্র ১৪ ওভারই খেলতে পারে বাংলাদেশ। তাতে ৪০.১ ওভারে বাংলাদেশের সংহগ্রহ ১০৬ রান সবক’টি উইকেট হারিয়ে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান ৯৭ বল খেলে ৩০ রান করেন জয়। ভারতের কাছে টেস্ট সিরিজ হারের পর এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শোচনীয় শুরু করলো টাইগাররা। সাকিব আল হাসানকে দলের বাইরে রেখে এই সিরিজ খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করতে নেমে অবশ্য ভালো শুরু করতে পারেনি। এই ম্যাচটি নিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের শেষ ৭টি ইনিংসের মধ্যে ষষ্ঠবার ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে গেল। ব্যাটিংয়ের এই অবস্থা শান্তকে চিন্তায় রাখবে ভীষণভাবে। বোলিং ভালো হলেও সেটা প্রোটিয়ারা বাজিমাত করতে পারবে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। মিরপুরের পিচে প্রথমদিন ব্যাটিং করাটা বরাবরই কঠিন। এবার দ্বিতীয় দিনে পিচ কী রকম আচরণ করে সেই দিকেই তাকিয়ে সবাই!