গত পাঁচ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে কোথায় রয়েছেন, সেই বিষয়ে কথা বলেছে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর। বৃহস্পতিবার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও ভারতেই রয়েছেন।’’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের বিষয়ে আমি আগেই বলেছিলাম যে, তিনি স্বল্প সময়ের নোটিশে এখানে এসেছিলেন এবং তিনি এখানেই রয়েছেন।’’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চরম আকার ধারণ করায় গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে সামরিক বাহিনীর বিমানে করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত গন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন ধরনের জল্পনা থাকলেও তিনি কতদিন ভারতে অবস্থান করবেন, সেই বিষয়ে দেশটির সরকার কোনও তথ্য জানায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক রনধীর জয়সওয়ালকে প্রশ্ন করে বলেন, আজ দুপুরের দিকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আগামী মাসে তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে ভারতের পদক্ষেপ কী হবে? এছাড়া বাংলাদেশ থেকে অনেক খবর আসছে যে, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন, অথবা ভারতের বাইরে আছেন এবং তিনি ভারতে ফিরে আসতে পারেন। ভারতের সরকার তাকে ট্রাভেল ডক্যুমেন্ট দিয়েছে। সুতরাং ভারতে শেখ হাসিনার স্ট্যাটাস পরিবর্তন হয়েছে কি না, অথবা তার অনুরোধে নাকি স্বল্প সময়ের নোটিশে এখানে অবস্থান করছেন? নাকি তার একই স্ট্যাটাস এখনও অব্যাহত আছে?
এই প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের বিষয়ে সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদন পেয়েছি। তবে এই বিষয়ে আমার কাছে মন্তব্য করার মতো কোনও তথ্য নেই। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এখানে অবস্থানের বিষয়ে আমি আগেও জানিয়েছি যে, তিনি নিরাপত্তার স্বার্থে স্বল্প সময়ের নোটিশে এখানে এসেছেন এবং তিনি এখানেই আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অপর এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বলেন, গতকাল (বুধবার) বাংলাদেশের সরকার বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীসহ সাতটি জাতীয় দিবসের ছুটি বাতিল করে একটি আদেশ জারি করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের মন্তব্য কী? পাশাপাশি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনের ভিসা কার্যক্রম কী স্থগিত থাকবে, নাকি নতুন করে শুরু হবে?
জবাবে রনধীর বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ভিসা কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। মেডিক্যাল ও জরুরি ভিসা হাই কমিশন থেকে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং আমাদের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করার মতো পরিস্থিতি যদি তৈরি হয়, তাহলে আমরা তখন তাই করবো।’’
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক পূজা উদযাপনের সময় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রচুর সহিংসতা হয়েছে। পূজা প্যান্ডেলে সহিংসতা হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা কিছু বিবৃতিও দিয়েছি। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। তখন আমাদেরকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারের সুরক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। লোকজনকে নিরাপদ রাখার বিষয়ে অবশ্যই সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে।