সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের সুরমা নদীতে লামাকাজী অ্যাডমিরাল এমএ খান সেতুটির বয়স ৪০ বছর। আর সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের কুশিয়ারা নদীর শেরপুর এলাকায় নির্মিত শেরপুর সেতু চালু হয় ৩৫ বছর আগে। এই দুই সেতুতে যথাক্রমে ৩৪ ও ৩৩ বছর ধরে চলছে টোল আ দায়। ইজারাসংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের তথ্যে এরই মধ্যে আদায় হয়েছে নির্মাণ ব্যয়ের ১২ থেকে ১৫ গুণ টাকা। তবে এখনও চলছে টোল আদায়।
সেতু দুটি টোলমুক্ত ঘোষণা করতে তাই আন্দোলনে নেমেছেন এলাকাবাসী এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। লামাকাজী এম এ খান সেতুতে টোল আদায় বন্ধ না করলে আগামী ২০ অক্টোবর থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণাও দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতি।
সুনামগঞ্জ জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস মালিক সমিতির মহাসচিব জুয়েল আহমেদ বলেন, সাধারণত নির্মাণ ব্যয় ওঠার পর সেতু টোলমুক্ত করা হয়। কিন্তু ৩৪ বছর পরও লামাকাজী সেতুতে টোল আদায় হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টোল আদায় কিছুদিন বন্ধ ছিল। সেতু ইজারার মেয়াদও শেষ হয়েছে। তবে আবারও ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ জন্য তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
এদিকে টোল প্লাজা ব্যবস্থাপনার নামে শুভংকরের ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। ইজারা সংশ্লিষ্ট একাধিক ঠিকাদার জানিয়েছেন, ইজারা পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো টোল আদায় করে বছরে সরকারকে যে টাকা দেয়, তার চেয়ে বেশি নেয় ব্যবস্থাপনার নামে। অথচ সরকার সরাসরি ইজারা দিলে অন্তত দ্বিগুণ রাজস্ব পেত।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) থেকে জানা যায়, এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৪ সালে ৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ২২৬ মিটার দীর্ঘ অ্যাডমিরাল এম এ খান সেতু নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হয় টোল আদায়। আর ১৯৯০ সালে ১০ কোটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ২৮৫.৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের শেরপুর সেতু। সিলেটের প্রবেশমুখে সেতুটি থেকে টোল আদায় শুরু হয় ১৯৯১ সালের ১ এপ্রিল থেকে। টোল প্লাজা স্থাপনের পর থেকে এটি ইজারা দিয়ে আসছে সরকার।
সেতু দুটির সাবেক ইজারাদার ও সংশ্লিষ্ট একাধিক ঠিকাদার জানান, লামাকাজী সেতুর সবশেষ ইজারাদার ২০২১ সালে প্রায় ১৮ কোটি টাকার টোল আদায় করেন। এবার ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকায় ইজারার প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ সেতুটি থেকে কম হলেও শতকোটি টাকা টোল আদায় হয়েছে। শেরপুর সেতুতেও টোল আদায় হয়েছে শতকোটি টাকার বেশি। এই সেতু এক সময় কোটি টাকার কমে ইজারা দেওয়া হলেও গত ১০ বছরে প্রতিবার ৫ থেকে ২০ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।
১০০ মিটারের চেয়ে বড় সেতুতে টোল আদায়ের নীতিমালা থাকলেও কতদিন আদায় হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই বলে সমকালকে জানিয়েছেন সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন।
তিনি বলেন, স্থানীয়রা দাবি করে আসছেন টোলমুক্ত করার। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো নীতিমালা কিংবা আইন নেই। টোলমুক্ত করার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে যেখান থেকে রাজস্ব আসে, সরকার সাধারণত সেগুলো বন্ধ করতে চায় না।
সিলেট পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির সাবেক সভাপতি মইনুল ইসলাম জানান, শেরপুর ও লামাকাজী সেতু থেকে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে টোল আদায় হচ্ছে। এখন সরকারের উচিত তা বন্ধ করা।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সওজের একাধিক ঠিকাদার সমকালকে জানান, সরকার এসব সেতু থেকে পুরো রাজস্ব পায় না। যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টোল আদায়ের দায়িত্ব পায়, তাদের লুটপাট করার সুযোগ রয়েছে। সরাসরি ইজারা দিলে বেশি রাজস্ব আসত। সেতুর টোল প্রত্যাহার বিষয়ে তারা জানান, ২৫-৩০ বছর পর সাধারণত সেতু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে এটা কোনো আইন নয়।