দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হলো আজ। সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলং চা-বাগান এলাকায় ও সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ডাবর মহাসিং নদীতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে জড়ো হয়েছেন হাজারো ভক্ত। উপজেলার বিভিন্ন মন্দির ও পাড়া থেকে প্রতিমা নিয়ে আসা হয় এখানে।
আমাদের গোয়াইনঘাট ও শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উপজেলায় ৬০টি পূজামন্ডবে পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি জানান, রোববার (১৩ অক্টোবর) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩৯টি পূজা মন্ডপ থেকে প্রতিমা বিসর্জনের লক্ষে বিজয়ী শোভাযাত্রা বের হয়। উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবীদূর্গার-বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মালম্বিদের এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন,পুলিশ বিজিবির কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং কড়া নজরদারিতে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়াই উৎসাহ উদ্দীপনায় দিয়ে শেষ হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
বিকেল ৫টায় জাফলং চা-বাগান এলাকায় প্রতিমা বিসর্জনকালে বিজিবির পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা দেয়া হয়। এসময় সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমানসহ বিজিবির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় ২১টি পূজামণ্ডপে পূজা-অর্চনা, শ্রদ্ধা নিবেদন এবং প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে দেবী দুর্গা ভক্তরা পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব উদযাপন করেন।
দুর্গোৎসবের প্রতিদিনই হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল বয়সের নারী-পুরুষ মণ্ডপে-মণ্ডপে গিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন। পাশাপাশি দূর্গতি নাশিনী দেবীদুর্গার কৃপা লাভের আশায় তারা আরাধনা করেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য উপজেলার প্রতিটি মন্ডপে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল। প্রতিটি পূজামণ্ডপে বিপুলসংখ্যক আনসার, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এদিকে, রোববার দিনশেষে দেবী দুর্গার বিদায়বেলায় আনন্দ-বেদনার মিশ্রণ অনুভূতিতে দেবী দুর্গার ভক্তদের হৃদয় সিক্ত করে তোলে। দশমীতে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেন ভক্তরা। দুপুর দেড়টায় প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশ্যে উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের মন্ডপ থেকে ডাবর মহাসিং নদী অভিমুখে মন্ত্রচ্চারণ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে বিজয়ার শোভাযাত্রা করে। পরে সেখানে বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
শান্তিগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিত চৌধুরী টপ্পা ও পশ্চিম পাগলা ইউপি সদস্য রঞ্জিত সূত্রধর জানান, দেবীদুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত শান্তি প্রিয়ভাবে আমাদের দূর্গোৎসব শেষ হল। বিগত পাঁচ দিন সকাল থেকেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পুজায় আনন্দ উল্লাস করেছেন। প্রশাসন, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সকল সচেতন মানুষের সহযোগিতায় অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্তি হয়েছে।
শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী বলেন, ‘প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি হল আজ। উপজেলার কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই অত্যন্ত সুন্দরভাবে পূজার সমাপ্তি রয়েছে। পূজায় যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ সে বিষয়ে অত্যন্ত সোচ্চার ছিল।’