সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সিংচাপইড় ইউনিয়নের গহরপুর গ্রামে জিয়াউর রহমান হত্যাকান্ডের পর স্ত্রী-সন্তানকে না জানিয়ে সন্দেহভাজনদের নিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে মামলা করার অভিযোগ উঠেছে নিহতের সৎভাইয়ের বিরুদ্ধে। নিহতের স্ত্রী রানু বেগম রোববার সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।
তিনি প্রকৃত খুনিরা যাতে পাড় না পায় সেজন্য বাদি পরিবর্তন করে যেকোনো গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে মামলা তদন্তের দাবি করেন। রানুর পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন ছেলে সালমান আহমদ। এ সময় মামলার দুই সাক্ষী মহদী গ্রামের জিলু মিয়া ও গহরপুর গ্রামের লক্ষন দত্ত উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রানু উল্লেখ করেন তার স্বামী জিয়াউর রহমান (৫৪) বাড়ির পাশে ভুষি মালের দোকান পরিচালনা করে সংসার চালাতেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর তিনি সিলেটে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। ১০ সেপ্টেম্বর সকালে পাশের মহদী গ্রামের খালে একটি বস্তাবন্দি লাশ পাওয়া যায়। উদ্ধারের পর লাশটি জিয়ার রহমানের বলে শনাক্ত করেন তারা। লাশের মুখ বিকৃত, গলায় কাপড় দিয়ে ফাঁস লাগানো, হাতপা বাধা ও আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওই সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেলসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
রানু জানান, তারা যখন শোকে মুহ্যমান ওই দিন রাতে কাউকে না জানিয়ে তার স্বামী স্বামীর সৎভাই তাজিজুর রহমান অজ্ঞাতনা আসামি করে ছাতক থানার মামলা করেন। মামলায় তিনি ও তার ছেলে সালমান ছাড়াও সাক্ষী রাখা হয় মহদী গ্রামের প্রনব সূত্রধর, একই গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছ, জিলু মিয়া, গহরপুর গ্রামের লক্ষন দত্তকে।
অথচ সাক্ষী কাউকে অবগত করেন নি বাদি। লাশ উদ্ধারের সময়ও তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না এমনকি ১০ বছর ধরে অন্য গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করছেন। বাড়ির সাথে কোনো যোগাযোগও নেই। বাড়িতে তিনি ও তার ছেলে এবং স্বামীর আপন ভাই মুজিবুর রহমান থাকার পরও কাউকে না জানিয়ে অতিউৎসাহী মামলা করেন তাজিজুর।
মামলার পর তার আচরণ ও সন্দেহভাজনদের সাথে চলাফেরার বিষয়টি তাদের দৃষ্টিগোচর হয়। এমনকি পুলিশ জড়িতদের শনাক্তের চেয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যদের বার বার জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বাদি পুলিশকে পারিবারিক বিরোধের ভুল তথ্য দিচ্ছেন।
এজাহারে নানা তথ্য বিভ্রাট ও অসঙ্গতি রয়েছে রানু জানান এজাহারে নিহতের পরিবারের যে উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যে। কারণ বাদি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। লাশ শনাক্ত হয় বেলা ২টা থেকে বিকাল ৩টার দিকে আর এজাহারে উল্লেখ করা হয় সকাল ১০টার কথা। প্রশ্ন হচ্ছে বাদী ঘটনাস্থলে থাকলে এজাহারে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি কেন?
খুনের সাথে সন্দেহভাজনদের বিষয়টি উল্লেখ করে রানু জানান, গহরপুর গ্রামের লন্ডন প্রবাসী তাজ উদ্দিনের সাথে তার স্বামী পূর্ব বিরোধ ছিল। ১০-১২ বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাজ উদ্দিন দেশ ছেড়ে যান। সম্প্রতি দেশে ফেরার পর তার স্বামী হত্যাকান্ডের শিকার হন। তিনি খুন হওয়ার আগের দিন তাজ উদ্দিন তাকে দোকান থেকে ডেকে নিয়েছিলেন। খুনের পর বাদীর সাথে তাজ উদ্দিনের যোগাযোগ দেখা গেছে।
গোষ্টিগত যাদের সাথে বিরোধ তাদের সাথেও বাদির যোগাযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় ঘটনার দুই দিন পর তিনি বাদি হয়ে তাজ উদ্দিন ও মামলার বাদিসহ গ্রামের জয়নাল আবেদিন, রাজু মিয়া, গৌছ উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে সুনামগঞ্জ আমল গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দরখাস্ত করেন। একই ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ায় কারণে পুলিশ প্রতিবেদনের নির্দেশ দেন এবং জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত। মামলার খবর পেয়ে ইতোমধ্যে তাজ উদ্দিন দেশ ছেড়ে গিয়েছেন বলে জানান রানু।
তিনি স্বামীর প্রকৃত খুনীদের সনাক্ত করতে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি ও সুনামগহ্জের পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন পাশাপাশি বাদি পরিবর্তন করে কোনো গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে মামলাটি তদন্তের দাবি জানান।