মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলতে নেমেছেন শেষ ম্যাচ। এ নিয়ে শুরুতে কিছু আনুষ্ঠানিকতাও হলো।
কিন্তু ম্যাচ শেষে এ নিয়ে হয়তো ভ্রুক্ষেপ থাকবে কমই। ভারতের ব্যাটাররা রীতিমতো তুলোধোনা করেছেন বাংলাদেশের বোলারদের।
চার ছক্কা হাঁকিয়েছেন, রেকর্ড ভেঙেছেন, গড়েছেন মাইলফলক। এরপর ব্যাটারদের কেবল হারের ব্যবধানই কমানোর ছিল।
শনিবার হায়দরাবাদে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষটিতে বাংলাদেশকে ১৩৩ হারিয়েছে ভারত। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৯৭ রান করে স্বাগতিকরা।
ওই রান তাড়া করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সবগুলোতে জিতে তাদের হোয়াইটওয়াশ করেছে ভারত।
টসের সময় বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছিলেন, আগে ফিল্ডিং করতে আপত্তি নেই তার। সময় যত গড়িয়েছে, নিজের বলা কথাটা নিয়ে হয়তো আফসোসই করেছেন তিনি। ভারতের ব্যাটারদের ঝড়ে একের পর এক রেকর্ডে তার কেবল হতাশাই বেড়েছে।
বাংলাদেশ অবশ্য প্রথম উইকেট পেতে খুব বেশি সময় নেয়নি। তানজিম হাসান সাকিবের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে অভিষেক শর্মা ক্যাচ দেন মাহেদী হাসানের হাতে। ওটুকু অবধিই। এরপরই অবিশ্বাস্য এক জুটিতে বাংলাদেশকে তুলোধুনার শুরু করেন সূর্যকুমার যাদব ও সাঞ্জু স্যামসন।
পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ৮২ রান তুলে ভারত। এটিই তাদের টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ, এর আগে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দুবাইয়ে করা ৮২ রান ছিল সর্বোচ্চ। সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই দলীয় শতরান পূর্ণ করে ভারত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এর আগে কখনো এত দ্রুত দলীয় রানের শতক পূরণ করতে পারেনি তারা।
বাংলাদেশের বোলাররা দিশেহারা হয়ে পড়েন একেবারেই। সবকিছু ছাড়িয়ে যায় রিশাদ হোসেনের করা দশম ওভারে। প্রথম বলটি ডট দেন সাঞ্জু স্যামসন, এর পরের পাঁচটি বলেই হাঁকান ছক্কা। দশ ওভার শেষে ভারতের রান হয় ১৬৬, এটিও সর্বোচ্চ।
এরপর ১৩তম ওভারে মাহেদী হাসানকে চার হাঁকিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন সাঞ্জু স্যামসন। তার ৪০ বলের সেঞ্চুরি পূর্ণ সদস্য দেশের ব্যাটারদের মধ্যে চতুর্থ দ্রুততম।
সূর্য ও স্যামসনের মারকুটে ব্যাটিংয়ে যখন আর পথ খুঁজে পাচ্ছে না বাংলাদেশ, তখন কিছুটা স্বস্তি এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার বলে মেহেদী হাসানের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১১ চার ও ৮ ছক্কার ইনিংসে ৪৭ বলে ১১১ রান করেন মোস্তাফিজ।
শেষ ম্যাচ খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও উইকেটের দেখা পান। ৩৫ বলে ৭৫ রান করা সূর্য তার বলে ক্যাচ দেন রিশাদ হোসেনের হাতে। তার সঙ্গে স্যামসনের জুটিটি ছিল ৭০ বলে ১৭৩ রানের।
কিন্তু দুই উইকেট নিয়েও ঝড় থামানো যায়নি। ১৪ ওভারের মধ্যেই দুইশ ছুয়ে ফেলে ভারত। এটি টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় দ্রুততম। শেষ ওভারে গিয়ে দুই উইকেট নিয়ে ভারতকে তিনশ রান করা থেকে আটকে রাখেন তানজিম হাসান সাকিব।
প্রায় অসম্ভব লক্ষ্য তাড়ায় নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মায়াঙ্ক যাদবের বল ছাড়বেন নাকি খেলবেন, বুঝে উঠতে পারছিলেন না পারভেজ হোসেন ইমন। শেষ অবধি প্রথম স্লিপে থাকা রিয়ান পরাগ তার ক্যাচ নেন।
দলের রান যখন ৩৫, তখন দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এবার ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে বরুন চক্রবর্তীর হাতে ক্যাচ দেন ১২ বলে ১৫ রান করা তানজিদ হাসান তামিম। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
রবি বিষ্ণয়ের বলে রিভার্স সুইপ করতে গেলে বল উপরে উঠে যায়, ১১ বলে ১৪ রান করা শান্তর ক্যাচ নেন স্যামসন। দ্বিতীয় বলে শান্ত আউট হওয়ার পর বাকি চারটি বল খেলেছিলেন তাওহীদ হৃদয়, রান করতে পারেননি তিনি। বিষ্ণয় দেন উইকেট মেডেন। ছয় ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান ছিল ৫৯।
এরপর জুটি গড়ার একটা চেষ্টা ছিল হৃদয় ও লিটনের। অবশ্য মেরে খেলতে গিয়ে ২৫ বলে ৪২ রান করে ফিরতে হয় লিটনকে। ৩৮ বলে তাদের জুটি ছিল ৫৩ রানের। লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
বিদায়ের ম্যাচটিতে অবশ্য খুব আশা জাগানিয়া কিছু করতে পারেননি তিনি। ৯ বল খেলে ৮ রান করে রিয়াদ আউট হয়েছেন মায়াঙ্ক যাদবের বলে বাউন্ডারিতে রিয়ান পরাগের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১৪১ টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারের শেষটা হয়েছে সাদামাটা।
এরপর লড়াই করার চেষ্টা করেন তাওহীদ হৃদয়। যদিও তার কাজ ছিল কেবল রেকর্ড হার থেকে দলকে বাঁচানো। সেটি তিনি করতে পেরেছেন কিছুটা। ১৩৩ রানের জয়টি ভারতের জন্য টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ৪২ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৩ রানে অপরাজিত থাকেন হৃদয়।