সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন

বন্যা সিলেট অঞ্চল; কারণ ও প্রতিকার

  • প্রকাশের সময় : ২২/০৬/২০২৪ ০২:৩৯:৩৫
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
90

: রুহুল কুদ্দুস বাবুল :


সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই এ চারটি নদীর প্রবাহ থেকেই বন্যায় প্লাবিত হয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল। এগুলো বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদী। ভারতের মণিপুর পাহাড়ের মাও সংসাং হতে বরাক নদীর উৎপত্তি। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি অমলসীদ নামক স্থানে এসে নদীটি দুটো শাখায় বিভক্ত হয়। উত্তরের শাখাটি সুরমা ও দক্ষিণের শাখাটি কুশিয়ারা নাম ধারন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সুরমা, কুশিয়ারার ৩০০ কিলোমিটার উজানে বরাকের উৎপত্তিস্থল প্রায় ৩৭৮ ফুট উপরে। এভাবে মনু ও খোয়াই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ী অঞ্চল থেকে নিম্নমুখি প্রবাহ নিয়ে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করে কুশিয়ারায় মিলিত হয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি আন্তঃসীমান্ত নদী সিলেট অঞ্চলে প্রবাহিত লংলা, গোয়াইন, পিয়াইন ইত্যাদি।


বর্ষায় কি পরিমান পানি এ নদীগুলোতে প্রবাহিত হয় তা সহজেই অনুমান করা যায়। শতশত বছর যাবৎ এসব অববাহিকায় যে পরিমান পানি প্রবাহিত হত এখনও তাই হয় কিংবা বিশ্বের জলবায়ুর পরিবর্তনের কারনে না হয়, একটু বেশিই হয়। কিন্তু বিগত প্রায় ১৫/২০ বছর যাবৎ এ নদীগুলোর বর্ষাকালিন প্রবাহ এ অঞ্চলের জনপদ ভাসিয়ে ধ্বংসলীলা চালায় কেন? এজন্য কি নদীগুলো দায়ী নাকি যারা আক্রান্ত তারা দায়ী। একটু ভাবুন।


এসব নদীর প্রচুর শাখা প্রশাখা ছিল, যেসব শাখা প্রশাখার মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের ছোট বড় অসংখ্য হাওড়, বিল ইত্যাদি প্রাকৃতিক জলাধারে নদীগুলোর অতিরিক্ত পানি প্রবেশ করতো। এখন অনেক শাখা নদী ভরাট হয়ে গেছে, খাল ভরাট হয়ে গেছে। নদী, খালের জায়গাও দখল হয়ে গেছে। স্বাভাবিক পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ কিংবা বাধাগ্রস্থ। এসব উদ্ধারের  কোন উদ্যোগ নেই, কারো চিন্তাও নেই, এক নম্বর কারণ। দ্বিতীয় কারণ -বিগত ৪০ বৎসর যাবৎ চলমান ভোট বাগানোর উন্নয়নের রাজনীতি। অপরিকল্পিত, অপরিনামদর্শি সিদ্ধান্তে রাস্তা নির্মাণ, বাড়িঘর নির্মাণ ইত্যাদি হয়েছে। গ্রাামের যে পথে নৌকা চলতো, সেখানে প্রাডো জীপ চলে। পানি নিস্কাশনের পথ বন্ধ করে উন্নয়ন। যেখানে ১০০ ফুট ব্রীজ দরকার সেখানে ১০ ফুট কালভার্ট, যেখানে কালভার্ট দরকার সেখানে সরাসরি রাস্তা করা হয়ে গেছে। জলাশয় ভরাট করে স্টেডিয়াম, ক্যান্টনমেন্ট নির্মান, ইপিজেড নির্মাণ, আবাসিক এলাকা তৈরি। তাছাড়া লুটেরা রাজনীতির সুফলভোগী এক শ্রেণীর কালো টাকার মালিক ভুমিখেকো, যারা অসংখ্য প্রাকৃতিক জলাশয় ভরাট করে হাউজিং করেছে। হাকালুকি, দেখার হাওড়ের মত জায়গায় মানববসতি গড়ে উঠেছে।


অতি সাম্প্রতিককালে খাদিম পরগণা থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা পূ্র্বে জৈন্তাপুর ব্যাপী বিস্তৃত বিশাল হাওড় ভরাট করে নতুন ক্যান্টনম্যান্ট করা হয়েছে। সুরমা নদী থেকে কয়েকটি খাল কুশিঘাট থেকে ভাঘার খালপাড় পর্যন্ত এই সীমার মধ্যে প্রবাহিত হয়ে ভরাট হওয়া হাওড়ে  পড়েছিল, এর মধ্যে কুশি গাঙ (কুই গাঙ) আছে। নতুন ক্যান্টনম্যান্টের জন্য হাওড় ভরাট হওয়ায় ছোট ছোট খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। শুধু কুশি গাঙে একটা কালভার্ট দেয়া হয়েছে। ক্যান্টনম্যান্ট হওয়ার পর কুশিঘাট থেকে মুরাদপুর, খালপাড় পর্যন্ত ১০/১৫ ফুট গভীর জলাশয় ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসন প্রকল্প। এসব খাল ও কুশি নদী বর্ষায় সুরমা নদীর উপচে পড়া পানি প্রবাহিত করে ভরাট হয়ে যাওয়া হাওড় দিয়ে নিয়ে যেতো চিকনাগুলের কাপনা নদীতে। সেই পথ ধরে পানি ছড়িয়ে যেতো জৈন্তার হাওড় বিলে অর্থাৎ প্রাকৃতিক প্লাবন ভুমিতে। বিগত প্রায় ৭/৮ বছর যাবৎ সুরমার অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেট নগর প্লাবিত হওয়ার এটা অন্যতম প্রধান কারণ।


তৃতীয় কারণ পলিতে ভরে যাওয়া মূল নদীগুলো নিয়মিত ড্রেজিং না করা। এরকম মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা ই প্রতিবছরের বন্যার কারণ।


বন্যার কবল থেকে বাঁচতে, নাব্যতা নষ্ট হওয়া নদীগুলো বাঁচাতে পানি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে দ্রূত পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করা সময়ের দাবি। না হলে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় স্থায়ী রূপ নেবে।


লেখক: রাজনীতিবিদ ও কলাম লেখক।


সিলেট প্রতিদিন / এমএনআই


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি