সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন

সিলেটে বাসা ভাড়া চ্যালেঞ্জিং : ভাড়াটিয়াদের বিড়ম্বনা

  • প্রকাশের সময় : ০৯/০৫/২০২৪ ১২:৪৪:৪৮
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের সিলেট নগরী
Share
130

তাসলিমা খানম বীথি



মাস শেষ না হতে বাড়িওয়ালা বাসা ছাড়তে বলে। যে করেই হোক, বাসা খালি করতে হবে। হঠাৎ করে বাসা ছেড়ে বাসা পাওয়া কঠিন তাই আমাদের সময় লাগবে। কোন সময় দেওয়া যাবে না বলে বাড়িওয়ালা সাফ কথা।


যাই হোক, শেষমেষ নতুন এলাকায় নতুন বাসা ওঠলেও সেখানেও আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে দেখে আবারো নতুন বাসা খোঁজতে থাকেন তানিয়া। যেখানে বাজেটের মধ্যে চলতে পারে। এভাবে বাসা ভাড়া বিড়ম্বনা নিয়ে কথা বলেন সিলেটে বসবাসকারি বাসিন্দা তানিয়া বেগম।


অনেকেই আবার শর্ত জুড়ে দেন, শর্তগুলো পূরণ করে কীভাবে তিনি বাসা ভাড়া নেবেন এই নিয়ে আছে মহাবিপদে। যতদিন যাচ্ছে সিলেটে বাসা ভাড়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে।


এদিকে কর্মজীবী শিরিনা জানায়, ভাড়া বাসা খোঁজতে গিয়ে দেখা গেছে বেশিভাগই বাড়িওয়ালারা ছোট পরিবার ছাড়া কোন বাসা ভাড়া দিচ্ছে না। বেশি মানুষ কথা শুনে না করে দেন। তাহলে কি যৌথ পরিবারা একত্রে থাকতে পারবে না? আমার মনে হয় বর্তমানে ছোট পরিবার বাসা ভাড়া দিতে থাকলে যে মানুষগুলো যৌথভাবে বসবাস করছে। তাদের হয় তো পরিবার নিয়ে একসাথে বড় বাসা থাকা হবে না।


আর্জেন্ট মে মাস থেকে ছোট পরিবারের সাথে সাবলেট ভাড়া দেয়া হবে। শুধু ফিমেল। চাকুরীজীবি অথবা একজন ছাত্রী। টাইলস করা ফ্ল্যাটের একটি রুম ভাড়া যাবে। সিলিন্ডার গ্যাস, ফ্রিজ, সার্বক্ষণিক পানি সরবরাহ, ওয়াইফাই সবই আছে। লোকেশন :- ইলেকট্রিক সাপ্লাই। বাসা ভাড়া পেইজ থেকে কল করে বিস্তারিত জানতে চাইলে বাড়ীওয়ালা বলেন, ভাড়া ৪০০০/= এক রুমে একজন থাকতে পারবে। মোবাইলের অপাশ থেকে শিক্ষার্থী আয়েশা বলে, মাকে নিয়ে থাকা যাবে কি না? শুনে তিনি বলে, শুধু মাত্র একজনই দুজন থাকতে পারবে না। এভাবে যদি বাড়িওয়ালারা শর্ত জুড়ে দিয়ে বাসা ভাড়া দিতে থাকে তাহলে মানুষ তার পরিবার থেকে বিছিন্ন হয়ে যাবে।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আম্বরখানায় এলাকায় একটি ভবনে ছোট পরিবার বাসা ভাড়া দেওয়া লেখা দেখে সরাসরি বাড়িওয়ালী সাথে কথা বলে জানা যায়, তার পুরো ভবনেই শিক্ষার্থীরা থাকে। কেউ কলেজে পড়ুয়া কেউ আইএলএসটি করছে। জন প্রতি ২৭০০/- / ৩২০০/=  করে ভাড়া দিচ্ছে। তার বাসা থাকতে হলে সেখানে আবার বাধ্যতামূলক ফ্রিজ ব্যবহার করতে হবে। বললাম যদি কেউ ব্যবহার করতে চায় না তাহলে কী করবেন? তিনি বলেন, এটি বাধ্যতামূলক এখানে থাকতে হলে ফ্রীজ ওয়াইফাই ব্যবহার করবে। মহিলার কথা শুনে বুঝা যায় তিনি সিলেটের লোকাল স্থায়ী বাসিন্দা না। সিলেটের বাইরে থেকে এসেছেন। তার ভবনে বেশিভাড়ই স্টুডেন্ট দিলেও এ মাসে কাউকে না পাওয়া শুধু ছোট পরিবার ভাড়া দিতে চাচ্ছেন। নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাম দিয়ে কী করবেন।


প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরীরত আমিনা বেগম বলেন, সিলেট শহরের মধ্যে পরিবার মাবাবা ভাইবোন সন্তান নিয়ে বসবাস করাটা এখন অনেক কঠিন। একটা সময় ছিলো ব্যাচেলার ছেলে বা মেয়েদের কেউ বাসা ভাড়া দিতো না। এখন বাসা খোঁজতে বের হলে দেখা যায় বেশিভাগই বাড়িওয়ালারা ব্যাচেলার ছেলে/মেয়ে দিয়ে এখন আর কোন পরিবারকে খালি বাসা ভাড়া দিচ্ছে না। সিলেটে এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় কেউ আর ভাড়া দিয়ে থাকতে পারবে না। বাড়িওয়ালাদের বাসা ভাড়া নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের এবং সরকারীভাবে প্রদক্ষেপ নোটিশের আওয়াতা আনাটা জরুরী। যাতে করে সিসিকের সাধারণ মানুষজন বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে হয়রানী বা বিড়ম্বনায় না হয় এবং হুটহাট করে কোন ভাড়াটিয়াকে যেনো বাসা ছাড়তে না হয়। ভাড়াটিয়ারাও মানুষ সেটি মনে রেখে বাড়িওয়ালাদেরকে মানুষের প্রতি মানবিক হতে হবে।


বাংলাদেশে প্রচলিত বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রন আইন -১৯৯১ অনুযায়ী ধারা ১০,২৩,২৪, ২৫,২৬ বাড়ি ভাড়ার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এই আইন অনেক ভাড়াটিয়ারা জানেন না এবং অধিকাংশ বাসার মালিকও জানেন না এবং মানেন না। যেমন: মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ, এক মাসের অধিক অগ্রীম ভাড়া নেওয়া যাবে না, দুই বছরের আগে বাসা বাড়া বাড়ানো যাবে না, দুই বছর পর বাড়াটিয়াদের সম্মতির ভিত্তিতে বাসা বাড়ানো যেতে পারে, ভাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের আসবাপত্র ক্রয় বা আটক করতে পারবেন না। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার ১৮৮২ সনের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৯৭২ সালে চুক্তি আইন অনুযায়ী ভাড়াটিয়ার নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করলে ভাড়াটিয়াকে যখন তখন উচ্ছেদ করা যাবে না। ভাড়া দেয়ার পূর্বে ভাড়াটিয়াদের স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বসবাসের উপযোগী করে দেয়া, মেরামত, পানি সরবরাহ করা সহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বাসার মালিক তা মানেন না এবং দায়িত্ব পালন করেন না।


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দামসহ নিত্যপণের জীবনযাত্রার খরচ মেটাতে এমনিতেই সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ এলাকায় বাসাভাড়া বছরের শুরুতে নতুন করে বাড়ছে। যাঁরা ভাড়া বাসায় থাকেন। দেখা যায়, মাস শেষ না হতেই বাসা ভাড়ায় তাদের আয়ের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়ে যায়। মানুষের খরচের তুলনায় আয় বেশি হলে হয়তো খরচ বাড়লেও মানুষের তেমন সমস্যা বা কষ্ট হত না। এখন শহরকেন্দ্রীক সাধারণ মানুষের আয় যা হয় তার চেয়ে দ্বিগুন খরচ হচ্ছে। বাসা ভাড়া ভাড়াটিয়া আর বাড়িওয়ালাদের বিড়ম্বনায় যাতে পড়তে না হয় সেটি সবার খেয়াল রাখতে হবে।


”মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য , তাই মানুষের প্রতি মানবিক ভালোবাসা শহর হোক প্রাণের সিলেট।


সিলেট প্রতিদিন / টিবি


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি