দেবদাস রায় :: দিগন্ত উদ্ভাসিত কনক কান্তি, পরম করুণ, পতিত পাবন, প্রেমাবতার, গৌড়েশ্বরেশ্বর, শ্রীগৌর সুন্দরের পিতৃভূমি চির সৌন্দর্য্য ভূষিত, শ্রীগৌরমণ্ডল ভূমির প্রাণকেন্দ্র শ্রীহট্টের ঢাকা দক্ষিণস্থ ঠাকুর বাড়ি। বর্তমানে মহাপ্রভুর বাড়ি নামে সুপ্রসিদ্ধ।
সিলেট জেলাধীন বালাগঞ্জস্থ বরগঙ্গা (বুরুঙ্গা) গ্রাম থেকে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতামহ শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ শ্রীপাদ উপেন্দ্র মিশ্র ও আশ্চর্য্য গুণ শালিনী, সুন্দরী পিতামহী শ্রীমতি শোভা দেবী ঢাকা দক্ষিণ গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।
গুণশালী নিঃসন্তান ব্রাহ্মণ শ্রীপাদ উপেন্দ্র মিশ্র ও ভক্তিমতি শ্রীমতি শোভাদেবী ঢাকা দক্ষিণস্থ কৈলাশ পর্বতের উত্তরে গোপেশ্বর শিব মন্দিরের অমৃতকুণ্ডে দীর্ঘদিন তপস্যা করেন। তপস্যার ফলস্বরূপ ব্রহ্মজ্ঞান নারায়ণ অনুরক্ত সপ্ত ছেলের জনক হন।
“কংসারী: পরমানন্দো, জগন্নাথ স্ততঃপরঃ।
সর্বেশ্বরঃ পদ্মনাভো, জর্নাদ্দন, ত্রৈলোক্যপঃ”॥
(-শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী-১/১৫)/(চৈ: চ: ১/১৩)
পরম ভক্তিমান ছেলেরা হলেন যথাক্রমে কংসারী মিশ্র, পরমানন্দ মিশ্র, জগন্নাথ মিশ্র, সর্বেশ্বর মিশ্র, পদ্মনাভ মিশ্র, জনার্ধন মিশ্র, ও ত্রিলোকপ মিশ্র।
শ্রীপাদ উপেন্দ্র মিশ্রজীর জ্যেষ্ঠ পুত্র শ্রীপাদ কংসারী মিশ্রের একমাত্র ছেলে শ্রীপাদ প্রদ্যুম্ন মিশ্র ছিলেন সুপণ্ডিত এবং সংসার ত্যাগী সন্নাসী।
“তস্যৈবাদেশতঃ কৃষ্ণচৈতন্যস্য দয়ানিধেঃ।
প্রদ্যুম্নাখ্যেন মিশ্রেণ কৃতেয়মুদয়ধাবলী”॥
-(শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী -৬০)
কাশীতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জ্যেষ্ঠতাত ভ্রাতা শ্রীপাদ প্রদ্যুম্ন মিশ্রকে বংশ লতিকা প্রণয়নের আদেশ করেন এবং ১৪৩২ শকাব্দে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী গ্রন্থ প্রণয়ন করেন।
উল্লেখ্য, শ্রীল কৃষ্ণদাস গোস্বামী চরণ কর্তৃক ১৫৩৭ শকাব্দে (১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে) শ্রীশ্রীচৈতন্য চরিতামৃত প্রণিত হয়েছিল। দ্বিতীয় পুত্র শ্রীপাদ পরমানন্দ মিশ্রের বংশ পরম্পরা অধ্যবধি বহমান।
শ্রীল উপেন্দ্র মিশ্রের তৃতীয় পুত্র শ্রীপাদ জগন্নাথ মিশ্রের দুই পুত্র- জ্যেষ্ঠ ছেলে বিশ্বরূপ, কনিষ্ঠ বিশ্বম্ভর। বিশ্বরূপ অল্প বয়সে সন্যাস নিয়ে সংসার ত্যাগী হন। ছোট ছেলে বিশ্বম্ভরই হলেন সন্নাসী নিমাই। কালান্তরে তিনিই রাধাভাব ও দ্যুতি স্বরূপকম শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু।
ছোট চার ছেলে-সর্বেশ্বর মিশ্র, পদ্মনাভ মিশ্র, জনার্দন মিশ্র ও ত্রৈলোকপ মিশ্র ছিলেন সংসার উদাসী প্রেমোন্মত্ত সন্নাসী। তারা স্বল্পায়ুও ছিলেন। এই পুত পবিত্র, গুপ্তবৃন্দাবন পুণ্যতীর্থ ঢাকাদক্ষিণ ঠাকুর বাড়ি। শ্রীপাদ জগন্নাথ মিশ্র ভার্য্যা বধুমাতা শ্রীশচীদেবীর দিব্যগর্ভে এসেছিলেন কলিপাবনাবতার শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু।
পাদ্মে শ্রীভগবান বাক্যং-
“অদিতি দৈবমাতাচ নীলাম্বরসুতা শচী।
স্বরূপেষা লভজ্জন্ম নবদ্বীপে মনোরম”॥
-(শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী-১/১৮)
দেবমাতা অদিতি নীলাম্বর চক্রবর্তীর কন্যা শ্রীশচীদবী রূপে জন্মগ্রহণ করবেন।
“শৃণু শোভে! স্নাষায়ান্তে
প্রাদুর্ভাবামি চ-অনেঘ।
ততঃ পুত্রং স্নেষাষৈষ্ণব
নবদ্বীপে মনোরমে”॥
-(শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যোদয়াবলী-২/২৩)
শ্রীপাদ উপেন্দ্র মিশ্র জায়া শ্রীমতি শোভাদেবী একদা স্বপ্নাদেশ পেলেন- “জগতের পাপ বিমোচনের জন্য অচিরেই জগতে আবির্ভূত হব। তবে ঢাকা দক্ষিণস্থ বাড়িতে নয়।
কাল বিলম্ভ না করে পাঠিয়ে দাও পুণ্যতোয়া গঙ্গার তীরে নবদ্বীপ ধামে”॥
ঠাকুর মা স্বপ্নাদেশে স্বল্প গর্ভা বধুমাতা শ্রীশচী রানীকে নবদ্বীপ পাঠিয়ে দেন।
“শৃণু চার্বঙ্কি! তে গর্ভে পুরুষ: যো ভবিষ্যতি।
প্রস্থাপয়িষ্যসি চ তংদৃদৃক্ষা ময়ি বর্তত”॥
-(শ্রীকৃ:চৈতন্যোদয়া:-২/২৯)
বধুমাতাকে বিদায় ক্ষণে শোভাদেবী অশ্রুসজল নয়নে শ্রীশচীদেবীকে বললেন, ‘হে সুন্দরী! আগত মহাপুরুষের দর্শন-আকাক্সক্ষা নিবৃত করতে ঠাকুরমায়ের আলয়ে একবার পাঠিয়ে দিও।’
“সর্ব্বসদগুণপনাং তাং বন্দে ফাল্গুনপূর্ণিমাম।
যস্যাং শ্রীকৃষ্ঞচৈতন্যোহবতীর্ণ: কৃষ্ণনামভি:”
-চৈ:চ:(আদিলীলা-১/১৩)
যেই ফাল্গুনী পূর্ণিমায় শ্রীকৃষ্ণনামের সহিত শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, সর্ব্বসদগুন পরিপূর্ণা সেই ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিকে আমি বন্দনা করি।
শ্রীশ্রীশচীনন্দন গৌরহরি শ্রীধাম নবদ্বীপে ১৪০৭ শকাব্দে ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে ১৮ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭.০০ ঘটিকায় ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে আবির্ভূত হলেন।
শ্রীপাদ জগন্নাথ মিশ্র জ্যেষ্ঠ পুত্র সন্যাসী বিশ্বরূপ তীর্থধামে দেহ ত্যাগের সংবাদে শোকে শয্যাশায়ী হলেন। অবশেষে ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে জরভোগের পঞ্চ দিবসান্তর ভবলীলা সংবরণ করেন। স্বামীহারা শ্রীশচীমায়ের এগার বৎসরের নয়নমণি বালক নিমাই সেদিন খুব কাঁদলেন।
“বেদোক্ত বিধিনা কর্ম কৃত্বা গৌরাঙ্গ সুন্দর।
বঙ্গদেশে সময়াতো মাতুরাজ্ঞাং বিধায় সঃ।।
-(শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যোদয়াবলী-৩/১৩)
বয়প্রাপ্তিকালে শ্রীগৌরাঙ্গসুন্দর বেদোক্ত বিধান অনুসারে লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর সহিত শুভ বিবাহকর্ম সম্পাদন করে মায়ের আজ্ঞা নিয়ে পূর্ববঙ্গদেশে শুভাগমন করেন। শ্রীগৌরাঙ্গপ্রিয়া শ্রীমতি লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী শ্রীগৌরসুন্দরের বিরহে দগ্ধ হয়ে কিছুদিনের মধ্যে দেহত্যাগ করেন।
কথোদিনে প্রভু কৈল বঙ্গেতে গমন।
যাহাঁ যায় তাহাঁ লওয়ায় নামসঙ্কীর্ত্তন”
-(চৈ:চ:-১৬/৮-৯)
“হেনমতে প্রভু বঙ্গদেশ ভ্রমণ করি।
নিজগৃহে আইলেন গৌরাঙ্গ-শ্রীহরি”॥
-(চৈ:ভা:-১০)
শ্রীপ্রদ্যুমিশ্র কর্তৃক প্রণীত “শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী” গ্রন্থের বর্ণনায় তখন তিনি পৈতৃক নিবাসে যাননি।
“শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত” গ্রন্থে অচ্যুতনন্দ চৌধুরী তত্ত্বনিধির তথ্যমতে, ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রীচৈতন্য প্রভু আদি পিতৃনিবাস বুরুঙ্গা গ্রামে পিতামহ উপেন্দ্র মিশ্র ও পিতামহী শোভাদেবীকে দর্শন দান করেন। ঐ সময়ই লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর প্রয়াণ হয়। তথায় পিতামহ ও পিতামহীর সহিত সাক্ষাৎ হয় এবং লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর মহাপ্রয়াণ সংবাদ পাওয়ায় সে বার ঢাকাদক্ষিণ ঠাকুর বাড়িতে যাননি।
শ্রীচৈতন্য প্রভু ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে ২৯শে মাঘ চব্বিশ বৎসর বয়সে সন্যাস নিয়ে শান্তিপুর অদ্বৈত্য অঙ্গনে আগমন করেন।
“ইতি মাতৃবচঃ শ্রুত্বা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুঃ।
গুপ্তয়া লীলয়া গন্ত্তমুপক্রমমথাকরোৎ।।
-(শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী-৩/২৩)
তথায় শ্রীশচীমাতা প্রাণের নিমাইকে অপেক্ষা রত ঠাকুমা শ্রীমতি শোভাদেবীকে দর্শন দানের আদেশ করেন। এ বৎসরই স্বীয় অচিন্তনীয় শক্তি প্রকাশ করে গুপ্তলীলা সহকারে শ্রীগৌর সুন্দর চৈত্র মাসের কোন এক রবিবার গুপ্তবৃন্দাবন ঢাকাদক্ষিণ ঠাকুরবাড়ী প্রথম বারের মতো আগমন করেন।
“দণ্ডিনম্ তম্ সমালোক্য সুশীলা-শ্বশ্রƒম্ আদিশৎ।
শীঘ্রম্ অগত্য মাতঃ-তম্-অপশ্য ভিক্ষুবর-উত্তমম্:॥
-(শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী-৩/৩৮)
শ্রীগৌরাঙ্গ প্রভুর জেঠীমা সুশীলা দেবী ( শ্রীল পরমানন্দ মিশ্র পত্নী) অল্প বয়সী, উজ্জ্বল গৌরবর্ণ শোভিত দন্ডধারী, নবীন এক সন্যাসীর অপূর্ব তেজরষ্মি নিজাঙ্গিনায় দর্শন করে বিমোহিত হলেন। শাশুড়ীমাতা সংবাদ পেয়ে আনন্দ ও উৎকন্ঠিত চিত্তে গৃহাভ্যন্তর থেকে বহিরাঙ্গনে আসলেন।
শোভাদেবী স্বপ্নের প্রান পুরুষকে তৃষিত নয়নে দর্শন করেছিলেন। স্বপ্ন দেখা বংশী হস্তে,মযুর পুচ্ছধারী রসরাজ, বঙ্কিমঠামে দাড়িয়ে থাকা শ্রীকৃষ্ঞ বিগ্রহের পরিবর্তে তার সম্মুখে দেখতে পেলেন উজ্জ্বল দ্যুতি গৌরতনু এক নবীন সন্ন্যাসীর দিব্য মুর্তি।
“নমস্তে নবরূপায় পুন্ডরীকদলেক্ষণে।
সচ্চিদানন্দরূপায় স্বর্ণবর্ণায় বিষ্ণবে”॥
-(শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যোদয়াবলী-৩/৪২)
ধর্মপরায়ণা ঠাকুমা শোভাদেবীর বিনয় বচনে মনোবাসনা পূর্ণ করতে দিব্যচক্ষু দান করে চাক্ষুষ দেখিয়ে দিলেন মুরলী ধরন, নটবর বেশ, পদ্ম পলাশলোচন সচ্চিদানন্দ, স্বর্ণবর্ণ শ্রীবিষ্ণু স্বরূপটি। তিনি ঠাকুমাকে বল্লেন, “আমি সেইতো সেই, যিনি তোমার ঘরের নিমাই, তিনিই আবার দ্বাপরের কৃষ্ণ কানাই”। ভক্তিমতি বৃদ্ধা ঠাকুমা বিস্মিত ও পুলকিত হয়ে নবরূপধারী পদ্ম পলাশ লোচন সচ্চিদানন্দ বিগ্রহকে অশ্রুসজল নয়নে সমধুর স্বরে নমষ্কার ও স্তুতি করলেন। ঠাকুমায়ের সকাতর নিবেদনে মহাপ্রভুর অনুগ্রহে গৌর কৃষ্ণ যোগল বিগ্রহ ঠাকুর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত ও নিত্যপূজার্চ্চনার প্রচলন হয়।
“গৌর কৃষ্ণ” করুণা বিগলিত এই বিগ্রহ সিলেট অঞ্চল ব্যাতিত কুত্রাপি দৃশ্য হয় না।
উপেন্দ্র মিশ্রের ২য় ছেলে পরমানন্দো মিশ্রের বংশ পরম্পরায় ঠাকুর বাড়িতে প্রেমের ঠাকুর দয়াল হরি, গৌর সুন্দরের প্রেমময় সেবা চলছে।
বাংলাদেশের ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা যুদ্ধের ভয়াল দিনগুলি ছিল মন্দির ও শ্রীবিগ্রহাদীর নিরাপত্তার ভয়ঙ্কর দূর্দিন।
করুণাবতার মহাপ্রভু সেবক সঙ্গে সেদিন পাড়ি দিয়েছিলেন ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচর সন্নিকটস্থ শ্রীকোনা গ্রামে। অধ্যবধি আর ঢাকাদক্ষিণ ঠাকুর বাড়িতে ফিরে আসেননি। তখন থেকেই ঢাকাদক্ষিণ ঠাকুর বাড়ীতে প্রতিভু শ্রীবিগ্রহের পৃজার্চ্চনা প্রেমানন্দে চলছে।
“অধ্যপিও লীলা করে গৌর রায়
কোন কোন ভাগ্যবান দেখিবারে পায়”॥
মহাপ্রভু সদা সর্ব্বক্ষণ গুপ্ত বৃন্দাবন এ অঙ্গনে বিরাজমান থাকেন। ঠাকুমায়ের প্রাণের আর্তিতে পিতৃকুলকে প্রতিনিয়তই প্রতিপালন করে চলছেন।
সবুজ বৃক্ষলতার ছায়াঘেরা সুশীতল টিলাটক্করবেষ্টিত অপূর্ব নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্যে শোভিত শান্ত স্নিগ্ধ অঙ্গনে মনপ্রাণ শীতল হয়ে যায়। তাইতো ভক্তরা অদৃশ্য আকর্ষণে বারবার ছুটে আসেন। মহাপ্রভুর অপার করুনা সিক্ত ছায়াতলে সুদৃশ্য এ পূণ্য তীর্থ ভূমি।
এ বৎসর ২৭ বৈশাখ ১০মে শুক্রবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিবসটি সিলেটবাসীর মহানন্দের দিন। গুপ্ত এই আগমন লীলায় স্বপার্ষদ, গৌর পরিকর সঙ্গেই আদি মহাপ্রভুর শ্রীবিগ্রহ সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলাস্থ ঢাকা দক্ষিণ শ্রীশ্রী মহাপ্রভুর পৈতৃক বাড়িতে আসবেন।
শ্রীহট্টের মহাপ্রভুর লীলা পার্ষদবৃন্দ-পিতা শ্রীপাদ জগন্নাথ মিশ্র, মাতাশ্রীশচীদেবী, প্রথমা পত্নী লক্ষ্মীদেবী, ২য় পত্নী শ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী, মেসো শ্রীপাদ চন্দ্র শেখর, লাউড় অঞ্চলের নবগ্রামের মহাবিষ্ণুর অবতার শ্রীঅদ্বৈত্য ঠাকুর, পঞ্চখণ্ডের শ্রীবাস পণ্ডিত, দুলালীর সেন শিবানন্দ, মহলালের পদকর্তা বাসুদেব ঘোষ, গোবিন্দ ঘোষ।
“বাসুদেব ঘোষ কহে করি জোর হাত
যেই গৌর সেই কৃষ্ণ সেই জগন্নাথ।”
শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভুর চতুর্দশ বংশাবতংশ, নবদ্বীপের বৈষ্ণব সমাজের সভাপতি, ভাগবতরত্ন প্রভুপাদ শ্রীল প্রেমগোপাল গোস্বামী মহারাজের একান্ত ভক্তিপূর্ণ আহ্বান ও সার্বিক নেতৃত্বে শ্রীমন্ মহাপ্রভুর আদি বিগ্রহ সুদূর ভারত থেকে ঢাকাদক্ষিণ ঠাকুর বাড়িতে এক দিনের জন্য বেড়াতে আসছেন।
বাংলাদেশে মহাপ্রভুকে আনয়নের আয়োজক শ্রীশ্রীহরিভক্তি প্রচারিণী সভার যুবসভা। তাদের ভক্তিপূর্ণ এ মহতি উদ্যোগের ফলে আমাদের গৌরসুন্দরকে দর্শন করার সৌভাগ্য হলো।
মহাপ্রভু এ অপার করুণা। মহাপ্রভু স্বেচ্ছায় পিতৃভূমির স্বজন ও ভক্তকুলকে দর্শন দিতে আসছেন। পিতৃভূমি সিলেটবাসীর প্রাণ শ্রীগৌরাঙ্গের আগমনে প্রেমের বন্যা বয়ে যাবে।
“প্রাণগৌরাঙ্গ-নিত্যানন্দ বলি ডাকরে,
এমন দয়াল ভবে আর নাইরে।
আর নাই, আর নাই, আর নাই রে।
এমন দয়াল ভবে আর নাই রে”॥
বলে নাম প্রেমের বন্যায় নয়নাশ্রুজলে অবগাহন করবে।
মিশ্র বংশের বাংলাদেশের ঢাকা দক্ষিণস্থ ঠাকুরবাড়ির সর্বশেষ কুল প্রদীপ শ্রীল রাধাবিনোদ মিশ্রজী আপন ভজনে রসসিক্ত হয়ে কুলদেবতার মাধুর্য্যমণ্ডিত সেবা অশেষে বিশেষে করে সম্প্রতি নিত্যলীলায় প্রবেশ করেন। এখন তাঁরই উত্তরসূরি ভক্তিমতি, গুণমতি, সুপণ্ডিত, গৌরগত নিষ্ঠাবান সেবক ড. শ্রীমতি প্রকৃতি মিশ্রজী পতিকুলের কুলদেবতার প্রেমময় সেবা করে যাচ্ছেন।
তাঁর সর্বঙ্গজুড়ে অনুক্ষণ বিরাজ করেন প্রাণের ঠাকুর শ্রীগৌরাঙ্গসুন্দর।
দেশবিদেশের গৌরানুরাগী শতশত ভক্তবৃন্দের প্রতিদিনের মর্হুমুহু উপস্থিতি ঠাকুরবাড়িতে নবজাগরণ তৈরি হয়েছে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, শ্রীশ্রী হরিভক্তি প্রচারিণী সভা, সিলেট শাখা, সিলেট।