তাসলিমা খানম বীথি
রমজানে আব্বা নিয়মিত ইতিকাফ করেন। তখন আমরা পুরাতন পাড়া ছিলাম বাসার কাছেই মসজিদ। রাতে আম্মা তাহাজুদ নামাজ শেষ হলে আমরা দুই বোন আম্মার সাথে টিফিন নিয়ে যেতাম। মসজিদের গেইটে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তখন কোন পুরুষ মানুষ আসলে গেইটে, টিফিন নিয়ে ভেতরে যেতেন। মেয়ে সন্তান নিয়ে আমার মাবাবা কোন দিন মন খারাপ হয়নি। আমিও চেষ্টা করি তাদের প্রতি সব দায়িত্ব ঠিক মত করতে। এই দুনিয়া সবাই পর হলেও মাবাবা ই সব।
বাসা বদল করেছি ২০ রমজানের আগে। আব্বা আগেই বলে রাখেন। পুরতন পাড়া মসজিদে ইতিকাফে চলে যাবেন। বয়স্ক মানুষ না করলে মন কারাপ করবেন তাই আমরা কেউ না করিনি। সেহেরি আর ইফতার খাবার দেওয়া হয়তো সমস্যা হবে আসা যাওয়া। আব্বা যাবার আগে ভেবেছিলাম বাসা দূর হলোও সেহেরী খাবার নিয়ে যাবো। তাতে গাড়ী ভাড়া যাক কিংবা কষ্ট হোক। কিন্তু সেটি আর হলো না। গতকাল কারেনট গেলো আসলো রাত 3.22 মিনিটে। আজকে কারেন্ট যায় আসে। দুই বোন মিলে যেতে চাইলোও নতুন এলাকায় পথে সমস্যা হকে এটা ভেবে আম্মা যেতে দেয়নি। তাছাড়া আব্বা বারবার বলে গেছেন। আমরা যেনো খাবার নিয়ে চিন্তা না করি। খাবার ব্যবস্থা আল্লাহ ঠিকেই করে দিবেন। আমরাও জানি ভরসা করি রবের উপরে। রিজিক তো মহান আল্লাহর ফরসালা।
যাই হোক, ঘর থেকে আব্বার জন্য কোন খাবার দিতে না পেরে প্রচন্ড খারাপ লাগছে। সেহেরি সময় খেতে বসলে আমাদের মন খারাপ হয়। তবে শাহী ঈদগাহ মসজিদে আব্বার খাবারে ব্যবস্থা হবেই। এ জীবনে আমি কিংবা আমাদের পরিবার কাউকে কষ্ট দিছি না। কিভাবে সততার সাথে বাঁচতে হয় তাই সারাজীবন আব্বার কাছ থেকে শিখেছি। তবুও মনে হয় জীবনের উপর দিয়ে সাইক্লোন বয়ে যায়। কষ্ট পেতে হয় বলে জয়ের আনন্দ দীর্ঘস্থায়ী হয়। জানি খারাপ সময় সব সময়ের জন্য নয়!