বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২০২৩, ০২:২৯ অপরাহ্ন

সরকারি নিবন্ধন নম্বর : ৯৩

Sylhet Protidin 24
Post Top Bottom Google Ad Code

মানসিক স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রকাশ ২০২৩-১০-০৯ ০১:৪৮:০২
mentally

IT Factory Ad

ডা.আহমেদ রিয়াদ চৌধুরী : চতুর্থ শিল্প বিপ্লবোত্তর যুগে মানসিক স্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ন্যানোটেকনোলজি, সাইবার প্রসার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের কাছে সত্য-মিথ্যার এক কুহক সৃষ্টি করেছে। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য, স্মার্ট ফোন আসক্তি, সাইবার বুলিং প্রভৃতি মানুষকে করে তুলেছে নিঃসঙ্গ এবং হতাশাগ্রস্ত। বিরূপ প্রভাব পড়ছে মনে। অবনতি হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যের। পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি, বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগ। এতে করে ব্যক্তি যেমন ছিটকে পড়ছে জীবনের স্বাভাবিক গতি থেকে তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্র। একটি সফল সামাজিক বিপ্লবের জন্য চাই টেকসই উন্নয়ন। এজন্য পূর্বশর্ত হল দক্ষ জনশক্তি। দেশের জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হলে মানুষের জীবনে গুণগত পরিবর্তন দরকার। দরকার শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিকভাবে ভালো থাকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকেই বলছে সুস্থতা।

অর্থাৎ উপর্যুক্ত চারটি বিষয়ের কোন একটি অনুপস্থিতি, ঘাটতি অথবা ভারসাম্যহীনতা মানুষকে অসুস্থ বা জরাগ্রস্ত করে তুলে। শারীরিক যত্ন বা স্বাস্থ্যের ব্যাপারে আমরা যতটুকু তৎপর, মানসিক স্বাস্থ্য বা মনের যত্নের ব্যাপারে কি আমাদের তার কিঞ্চিৎ ব্যাকুলতা আছে? অথচ মন আছে বলেই তো আমরা মানুষ। মন যেমন প্রফুল্ল কিংবা ব্যথাতুর হয়, তেমনি রোগগ্রস্তও হয়। সেই রোগ ছোট কিংবা বড় যেকোন রকম হতে পারে। উদ্বিগ্নতা, শুচিবাই, ঘুমের সমস্যা, যৌন সমস্যা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, আত্মহত্যা ইত্যাদি ছোট ধরণের মানসিক রোগ।

আবার সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিজর্ডার, বিষণ্ণতার মতো গুরুতর মানসিক রোগও আমাদের সমাজে নেহায়েত কম না। সর্বশেষ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ (২০১৯) অনুসারে, বাংলাদেশে ১৮.৪% মানুষ বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগে ভুগছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও তিনগুণ বেশি মানুষ। বিশ্বে প্রতি ৫ জনের ১ জন কোন না কোন মানসিক রোগে আক্রান্ত।

সংক্ষেপে বললে মানুষের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকারকে বলা হয় মানবাধিকার। মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তির সম্মান, অধিকার, শ্রদ্ধা ও নিরাপত্তা প্রাপ্ত হবার অধিকারও মানবাধিকার। মানবাধিকার মানুষকে স্বাধীন ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকা এবং জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান করে। সৎ গুণগুলোকে বিকশিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে মানুষ এসব অধিকার প্রাপ্ত হয়ে থাকে। রাষ্ট্র শিক্ষার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে, সমাজে যোগ্যতা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের সুযোগ করে দেয়। মানবাধিকার নিশ্চিত করলে মানুষের মাঝে সম্প্রীতি তৈরি হয় যা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।

১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্বপ্রথম মৌলিক মানবাধিকারসমূহকে ঘোষণা এবং স্বীকৃতি প্রদান করা হয় যাকে সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ নামে আখ্যায়িত করা হয়।বিশ্বসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র একক কিংবা যৌথ প্রচেষ্টায় মানুষের এই অধিকারগুলোকে বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানসিক স্বাস্থ্যের সচেতনতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস নিয়মিত পালন করে আসছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার । মানসিক স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার একে অন্যের পরিপূরক। উভয়ের লক্ষ্য ও গন্তব্য এক এবং অভিন্ন। মানুষকে সর্বদা, সর্বোপরি সুস্থ, সক্ষম ও সক্রিয় রাখা। তার মানবিক, বুদ্ধিবৃত্তিক গুণাবলিকে বিকশিত করা এবং মানবকল্যাণে কাজে লাগানো। আমরা সুস্থ-সবল মানুষের অধিকার আদায় বা সংরক্ষণের ব্যাপারে যেমন উদ্বাহু, মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীদের মানবাধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে তেমনি বেখেয়াল কিংবা অনিচ্ছুক।

মানসিক রোগীর আবার মানবাধিকার কী? এমন কথাও সমাজে চাউর আছে। হ্যাঁ, মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রেও মানবাধিকার লংঘন হতে পারে। অনেক পরিবার ও সমাজে ট্যাবু বা অজ্ঞতা, অসচেতনতার কারণে মানসিক রোগীরা মানবেতর জীবন যাপন করে, চিকিৎসা ব্যাহত হয়। আবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় মানুষের মনোজগতে ক্ষত সৃষ্টি করে ফলে জন্ম নেয় নানাবিধ মানসিক রোগ।

রাজনৈতিক অস্থিরতা, অবৈধ অভিবাসন, শরণার্থী, যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদির কারণে বিশ্বব্যাপী মানসিক রোগের পারদ দ্রুত বাড়ছে। এমনকি মানসিক স্বাস্থ্য আইন এবং পলিসিও মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ কিংবা সংরক্ষণে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখে। একজন মানসিক রোগীর তার রোগ সম্পর্কে বিশদ জানার, চিকিৎসা গ্রহণ কিংবা বর্জনের পূর্ণ অধিকার আছে। অধিকার আছে রোগ সম্পর্কে মতামত দেয়ার, নিজের চিকিৎসার নথিপত্র দেখার, স্বাধীন মানুষ হিসেবে সমাজে বেঁচে থাকার, সম্পত্তি লাভ ও ভোগ করার। রয়েছে আইনি অধিকার, সমানাধিকার, সামাজিক যোগাযোগ ও অভিযোগের অধিকার, মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি নিরাপত্তা এবং বিনোদনের অধিকার। এগুলো পরিবার, চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে সুনিশ্চিত করতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার বিভিন্ন ধরণ এবং প্রয়োগ পদ্ধতি (approach) অদ্যাবধি চালু আছে। যেমন- মনোবিশ্লেষণী (Psychoanalytic), মানবতাবাদী (humanistic), জ্ঞানমূলক ও আচরণ ভিত্তিক (cognitive behavioral), সামগ্রিক (holistic) ইত্যাদি। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, উপর্যুক্ত প্রয়োগ পদ্ধতিগুলোর চেয়ে মানবাধিকার ভিত্তিক চিকিৎসা (human rights based approach) বেশি কার্যকর, লাভজনক, সাশ্রয়ী, যৌক্তিক এবং প্রায়োগিক। শতকরা নব্বই ভাগ রোগী এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা পেয়ে সন্তুষ্ট। কারণ মানবাধিকারই সভ্যতা, সুবিচার, সুশাসনের ভিত্তিমূল ও স্তম্ভ। এর ফলে মানসিক রোগী, রোগী পক্ষ এবং চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা, থেরাপিউটিক সম্পর্ক ও আস্থার বন্ধন তৈরি হয় যা রোগ নিরাময়, উপশম ও প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশে মানবাধিকার ভিত্তিক চিকিৎসা বেশি ফলপ্রদ হতে পারে। আমাদের সীমিত সামর্থ্য ও বাজেট নিয়ে আমরা সর্বজনীন মানবাধিকার নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। বর্তমান সরকার মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম নিয়ে যার পর নাই আন্তরিক। সরকার ইতোমধ্যে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন ২০১৮’ মহান সংসদে পাশ করেছে। মানসিক স্বাস্থ্যে সরকারের বরাদ্দ স্বাস্থ্যবাজেটের ০.৪৪%। যেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে তা স্বাস্থ্য বাজেটের ন্যুনতম ২.৭৮% হওয়া উচিত। এব্যাপারে আমরা সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এছাড়া জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগ ও বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মনোরোগবিদ্যা বিভাগে তিনশতের অধিক বিশেষজ্ঞরা তাদের সীমিত সামর্থ্যের আলোকে বহির্বিভাগ ও অন্তঃবিভাগে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মনোরোগবিদ্যা বর্হিবিভাগে গতবছর ৫৭৩৫ জন রোগীকে সেবা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি এবং বছর জুড়ে অন্তঃবিভাগে বেড অকুপেন্সি রেট ছিল গড়ে প্রায় ১৩০% এর বেশি। সামনের বছরগুলোতে এই ধারা আরও বেগবান হবে বলে আমরা আশা করছি। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২৩ সফল হোক। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সর্বজনীন মানবাধিকার বাস্তবায়িত হোক।

লেখক: ডা.আহমেদ রিয়াদ চৌধুরী

সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ,

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট

psychiatrydepartmentsomc@gmail.com

যুগ্ম-সম্পাদক বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি),

বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস, সিলেট (বাপসিল)।

সিলেট প্রতিদিন/ এমএ

Local Ad Space
Post Top Bottom Google Ad Code

বিজ্ঞাপন স্থান


পুরাতন সংবাদ খুঁজেন

ফেসবুক পেইজ

শান্তিগঞ্জে বিজয় দিবস উদযাপনে উপজেলা...


৭ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি বাড়ল গাজায়


মানবতাবিরোধী অপরাধে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড


মুমিনুলের দুই উইকেটে অবশেষে অলআউট...


মাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না রুয়েলের


দুর্নীতি মামলায় খালাস পেলেন নওয়াজ শরীফ


সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সেক্রেটারি গ্রে ফ তা র


এপেক্স ক্লাব অব সুরমা ভিউ’র ২য়...


সিলেটের ৬ আসনে ৫৫টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি


সিলেট বিভাগে তৃণমূল বিএনপির ১৮ প্রার্থীর...


দ্বিতীয় বিয়ে করবেন না অপু বিশ্বাস


সিলেটে ভারতীয় নাগরিকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড


নৌকার মাঝি হয়ে জেলা পরিষদ থেকে পদত্যাগ


নৌকার মাঝি রনজিতকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের...


সিলেটে মাদক কারবারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড


এম এ মান্নানকে ঘিরে জনতার বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস


উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে দ্বিতীয় দিনটা...


মশরিয়া এমদাদিয়া আলিম মাদ্রাসায় পছন্দের...


মনোনয়নপত্র জমা দিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ...


আ.লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মাহবুব আলী


হবিগঞ্জের ৪ আসনে ১৮ জনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ


নৌকায় উচ্ছাসিত ওসমানীনগর আওয়ামী লীগ


সেলফি তুলতে সিলেটের মাঠে শিশু


মসজিদের করা সকলের দায়িত্ব: মেয়র...


সিলেটে বঙ্গবন্ধু ক্রীড়া শিক্ষাবৃত্তির চেক...


‘মেরে খাওয়ার জন্য আসিনি’


স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন এমপি মজিদ খান ও মিলাদ...


হামাসের সবচেয়ে বড় ভয় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে :...


মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিবেন: সিলেটে ড....


উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন...


ড. মোমেনকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের উষ্ণ...


নেতা-কর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত উপাধ্যক্ষ...


অপপ্রচার সৃষ্টিকারীরা সকল কিছুতে ব্যর্থ -...


জকিগঞ্জে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার...


হবিগঞ্জ-২ : স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন...


বিজ্ঞাপন স্থান