বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৮ অপরাহ্ন

ছাতকে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুট

  • প্রকাশের সময় : ২৬/০৩/২০২৩ ০৫:২৮:০৪
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
8

ছাতকে বাংলাদেশ রেলওেয়ের কোটি-কোটি টাকার সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রতি রাতেই চুরি হয়ে যাচ্ছে রেলপথ বিভাগের মালামাল। অরক্ষিত রেলওয়ের সম্পদ এখানে লুটেপুটে খাচ্ছে একটি সিন্ডিকেট।

শনিবার রাতে সিলেটের জালালাবাদ থানা পুলিশ লামাকাজি এলাকা থেকে ছাতক রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ চোরাইমালসহ রজত নামের একজনকে আটক করেছে।

ছাতক রেলপথের চোরাই মালসহ পুলিশ আরো একাধিকবার সিলেট থেকে চোর আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। 

ছাতক থেকে সিলেট পর্যন্ত ৩৫ কি.মি.রেলপথের ৪টি রেলওয়ে স্টেশন, ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ, ভোলাগঞ্জ রেলওয়ের পাথর কোয়ারি, দেশের একমাত্র সরকারি কংক্রিট স্লিপার প্ল্যান্ট, ছাতকে রেলওয়ের কয়েকটি গোদাম, শতাধিক বাসা-বাড়ি, বিভিন্ন দপ্তর, হাসপাতাল, ভোলাগঞ্জ রেস্ট হাউস এবং বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা সহ হাজারো কোটি টাকা মূল্যের ভু-সম্পদ এখানে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আর রাতে চুরি হচ্ছে রেলপথ বিভাগের এসব সম্পদ। রেলওয়ের গোদাম থেকে মালামাল চুরি,নদীর ঘাটের পাথর ও লক্ষ লক্ষ টাকা মুল্যের স্ক্র‍্যাপমাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। 

উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারি না থাকায় সরকারি এসব সম্পদ প্রতিরাতেই চুরি হচ্ছে। করোনা মহামারির সময় থেকে ছাতক-সিলেট রেলপথে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে ভয়াবহ বন্যায় এ রেলপথের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হয়। যার ফলে  এ পর্যন্ত ছাতক-সিলেট রেলপথে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। তখন থেকেই এখানে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে কোটি-কোটি টাকা মুল্যের সরকারি সম্পদ। আর এই সুযোগে ছাতকে শুরু হয়েছে সরকারি সম্পদ লুটপাটের মহোৎসব। ছাতক এবং ভোলাগঞ্জে রেলওয়ের গোদাম, বাসাবাড়ি পুকুর দোকান-কোঠাও ভূমি ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লক্ষধিক টাকা আদায় করছে রেলওয়ের একটি সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বহিরাগতদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি চোর চক্র। কর্মকর্তা- কর্মচারিদের সহায়তায় রেলপথও গোদামের মালামাল চুরি ও বিক্রি করে তাদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে। 

সিলেটের কর্মকর্তারাও এখানের বাসাভাড়া, দোকান ভাড়া,পাথরসহ মুল্যবান মালামাল চুরির ভাগ পেয়ে থাকেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায়। গোবিন্দগঞ্জ, ছাতক,ভোলাগঞ্জের সকল চুরি দূর্ণীতির টাকার ভাগ নিচ্ছেন সিলেটে বসে থাকা রেলওয়ের কর্মকর্তারা।চোরাইমাল বিক্রি ছাড়াও জমি,দোকানকোঠা,বাসাবাড়ি থেকে এখানে প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা ভাড়া আদায় হয়ে থাকে। কিন্তু কাগজে-কলমে এসব বাসাবাড়ি পরিত্যক্ত দেখানো হয়েছে। বর্তমানে লাইনের স্লিপার, নাটবল্টু গাড়ির চাকা ও কাঠ চুরি হচ্ছে ব্যাপক হারে। গত কয়েক দিনের মধ্যে ছাতকে রেলওয়ের চালু হাসপাতালের দরজা-জানালা,সামনের গেটসহ ভেতরের সকল মালামাল চুরি হয়ে গেছে। তালাবদ্ধ থাকা এই হাসপাতালটির হাল-অবস্থা এখন আর নেই। শুধুমাত্র চারটি দেয়াল আর ছাদ রয়েছে। 

এদিকে ছাতকে রেলওয়ের সম্পদ পাহারায় (রক্ষায়) যেসব টিএলআর নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা শুধু কাগজে কলমে। ১২ থেকে ১৫ জন টিএলআরের নামে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা (প্রতিজনের) বেতন উত্তোলন করে ছাতক ও সিলেটের কর্মকর্তারা ভাগ-বাটোয়ারা করে খাচ্ছেন। আদৌ ছাতক-ভোলাগঞ্জে নিয়োগপ্রাপ্ত কোন টিএলআর (পাহারাদার) কাজ করতে দেখা যায়নি। কিছু লোকের নাম ভোটার আইডি ব্যবহার করে ভুঁয়া কাগজ পত্র দিয়ে মাসের পর মাস বেতন তুলে খাচ্ছেন তারা। বন্যার ক্ষয়-ক্ষতি দেখিয়ে সম্প্রতি কয়েক লক্ষ টাকার মেরামত কাজের নামেও  টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। 

স্থানিয় বাসিন্দা শামীম আহমদ,মানিক মিয়া, নুরুল গনি, আব্দুস শহিদ, আজাদ মিয়া জানান, ছাতক রেলওয়েতে যারা কর্মরত আছেন তাদের কোন ডিউটি (কর্ম) নেই বিনাকারণে সরকারি বেতন-ভাতা এমনকি নিয়মিত ভ্রমণ ভাতাও নিচ্ছেন তারা। রেলওয়ের মালামাল চুরির সাথে এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত। তারাই চোরদের নিয়ে সিন্ডিকেট করেছেন। স্টেশনসহ রেলপথ ও আশ-পাশ এলাকার মালামাল পাহারায় কোন লোকও নেই। এভাবেই মালামাল চুরির সুযোগ করে দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

তারা বলেন, ছাতকে রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। 

সিলেট জালালাবাদ থানার এস আই রেজাউল করিম  জানান,রেলগাড়ির চাকা, লোহা, ইত্যাদি চোরাই মাল  পিকআপভ্যানে করে নিয়ে পালানোর সময় রজত দাসকে আটক করা হয়েছে। আটক রজত দাস ছাতকের দক্ষিণ বাগবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা। তাকে জেল হাজতে  দেয়া হবে।

ছাতক রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারি প্রকৌশলী অঃ দাঃ কার্য (দায়িত্ব গোদাম ও স্টোর) (বদলি) আব্দুল নুর জানান,তিনি বর্তমানে সিলেটে বদলি হয়েছেন।ছাতকের গোদাম-স্টোরের দায়িত্ব এখনো তার কাছ থেকে কেউ বুঝে নেয় নি। গোদাম-স্টোর নদীর ঘাটের পাথরসহ মালামাল চুরির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সঠিক ভাবে তিনি বলতে পারছেন না। তবে পাথরসহ মালামাল এলোমেলো অবস্থায় আছে।

ছাতক রেলওয়ের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী জুবায়ের আহমদ জানান,রেলওয়ের অনেক মালামাল এখান থেকে খোয়া গেছে । এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সকল অনিয়ম-দূর্ণীতি৷ ও চুরির সাথে জড়িত এ বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।


সিলেট প্রতিদিন / ইকে


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি