ইমদাদ হকের জন্ম ১৯৮৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর নাটোর জেলার বাগাতিপাড়ায়। পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব হার্ডাসফিল্ডের যৌথ ফেলোশিপ নিয়ে ডিপ্লোমা করেছেন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে। এখন পড়ছেন ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিক্সে মাস্টার্স ইন অন্ট্রাপ্রেনিওরশিপে। লেখক ও সাংবাদিক ইমদাদ হক এখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত। একুশে বইমেলায় এসেছে লেখকের দ্বিতীয় গ্রন্থ— ‘সার্বিয়া: শুভ্র শহরের দেশে’। বইমেলা ও তাঁর বই নিয়ে তিনি কথা বলেছেন জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যমের সাথে-
মেলায় আপনার ভ্রমণ বিষয়ক বই এসেছে, পাঠকদের সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
ইমদাদ হক: এবার অন্যপ্রকাশ থেকে এসেছে ‘সার্বিয়া: শুভ্র শহরের দেশে’ ভ্রমণ গদ্যটি। আমি মূলত ভ্রমণ গল্পই লিখছি। শখ থেকেই ঘোরাঘুরি। এরপর পেশাগত কারণেও দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন দেশ ঘোরা হলো। কত দেশেই তো যাওয়ার সুযোগ পেলাম। একটি দেশের ঐতিহ্য, নান্দনিক সৌন্দর্য, তারুণ্যের পছন্দ— যেগুলো আমি দেখে এলাম, সেগুলো অন্যদেরও জানাতে চাই। জানানোর সহজ উপায়ের একটি হলো লেখালেখি। প্রতিদিন নতুন নতুন লোকজন আসছে, ঘুরে দেখছে। বই কিনছে। তাদের বইয়ের তালিকায় আমার বইটিও রাখছে। অনেকে আমাকে খুঁজে বের করছে। লেখক আর বইয়ের সঙ্গে পাঠকের অটো আর ফটোগ্রাফের আবদার— এটা তো একজন লেখকের সুখের ঘটনা।
এবারের বইমেলায় গিয়েছেন, কেমন লাগছে মেলার পরিবেশ, আপনার মত কী?
ইমদাদ হক: আমরা যারা সৃজনশীলতার চর্চা করি, তাদের জন্য বইমেলা একটি প্রীতিসম্মিলনী। আর সবার জন্য উৎসবও বটে। প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে দু’একবার মেলায় যাওয়ার চেষ্টা করছি। সবার সঙ্গে দেখা হয়, আড্ডা হয়। মেলার পরিবেশ ভালোই। এত বড় একটা মেলা, সেখানে কিছু সমস্যা কারও চোখে ধরা পড়তে পারে! তবে আমার কাছে পরিবেশটা ভালোই মনে হয়েছে। গতবছরের চেয়ে পরিসরটা মনে হয়— একটু কমানো হয়েছে। তাতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে মেলায় প্রবেশ করা ও বের হবার জন্য একটি গেট কমানো হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দিকের গেটটা খোলা রাখলে দর্শনার্থীদের যাতায়াতটা সহজ হয়। প্যাভিলিয়নগুলো তৈরিতে রুচির প্রকাশ পেয়েছে।
এবার অনেক তরুণ লেখকের বই প্রকাশ হচ্ছে। আপনিও তারমধ্যে একজন। তরুণ লেখকদের পাঠপ্রিয়তা কেমন?
ইমদাদ হক: লেখকদের মধ্যেও তারুণ্যের আনাগোনা বেড়েছে। প্রথিতযশা লেখকদের পাশাপাশি বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলে তরুণ লেখকদের বই প্রদর্শিত হচ্ছে। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, শিশু সাহিত্য, ভ্রমণ, অনুবাদের ক্ষেত্রেও তরুণ লেখকদের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ছে। বই বিক্রির ক্ষেত্রে হয়তো তারা খানিকটা পিছিয়ে। তবে প্রকাশকদের মধ্যেও তরুণ লেখকদের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। ছোটগল্প, মুক্তিযুদ্ধের বিষয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য, গবেষণা, বিজ্ঞান ও গণিত, শিশুসাহিত্যের বড় অংশেও তরুণদের অংশগ্রহণ পাকাপোক্ত হয়েছে। তরুণদের বই কেবল তরুণরাই পড়ছে না, সব শ্রেণির পাঠকই তরুণদের বই সংগ্রহ করছে। পাঠকপ্রিয়তার দিক থেকে তরুণদের বইও এগিয়ে আছে।
ডিভাইস ও ইন্টারনেটের সময়ে বই মানুষকে কেমন টানছে, আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
ইমদাদ হক: গবেষণা তো বলছে— ডিভাইসে পাঠক আটকে গেছে। বছর তিনেক আগে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস নিয়ে গবেষণা করেছিলেন আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। তারা বলছে, মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রতিদিন কিছু না কিছু বই পড়ে। আর ৮০ শতাংশের সময় কাটে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। বই পড়ার অভ্যাস কমার পেছনে ডিজিটাল ডিভাইস বা সোশ্যাল মিডিয়ার একটা প্রভাব তো আছেই।
আপনার প্রথম বই ছিল ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা নিয়ে, এই মুহূর্তে সারাদেশে ক্যাম্পাস রিপোর্টিংয়ের অবস্থা কেমন, আশাপ্রদ?
ইমদাদ হক: বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সাংবাদিকতার চল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজমে একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রকল্প আছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধানের নানান কৌশল ও পদ্ধতি শেখানো হয়। নরওয়ের বার্গেন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম প্রকল্পটি বেশ জনপ্রিয়। উত্তর আমেরিকা থেকে উত্তর ইউরোপ পর্যন্ত— বিশ্ববিদ্যালয় পযায়ে কেবল সাংবাদিকতাই নয়, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রতি গুরুত্ব উঠে আসছে জোরেশোরে। একজন শিক্ষার্থীর নিয়মিত পাঠের পাশাপাশি সাংবাদিকতা করাটা বেশ চ্যালেঞ্জের। প্রথমত সময় ব্যবস্থাপনা, দ্বিতীয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক রাজনৈতিক পরিবেশ, তৃতীয়ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরাগভাজন হয়ে ওঠা। এরপরও এক শ্রেণির শিক্ষার্থী বেশ আবেগ থেকেই সাংবাদিকতায় আসে। তাদের ক্ষেত্রে শেখার সুযোগটাও বেশি।
রিপোর্টিংয়ের জন্য পাঠ, আপনি এ বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ইমদাদ হক: সাংবাদিকতায় ভালো করতে হলে চলমান পড়াশোনার বিকল্প নেই। নিয়মিত ঘটনার মধ্যে থাকতে হয় সাংবাদিককে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য দরকার হয় প্রাসঙ্গিক প্রচুর তথ্য। পড়াশোনা ছাড়া এই তথ্যের সম্ভার গড়ে তোলার উপায় নেই। প্রতিদিনের পত্রিকা, বিশ্লেষণ, অতীতের ঘটনা পড়তে হবে। এই বিষয়ক পড়াশোনার জন্য বইপত্র পড়তে হবে। আবার, সময়টা পাল্টেছে। এখন সব গণমাধ্যমই ডিজিটাল ভার্সনকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কাজেই রিপোর্টারকে বাধ্য হয়েই ডিজিটাল ভার্সনের সঙ্গেও পরিচিত হতে হচ্ছে।
সাক্ষাতকার গ্রহণ- আবিদ হাসান