
তৃণমূল থেকে বেড়ে ওঠা ডায়নামিক জননেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

প্রতিদিন ডেস্ক
প্রকাশ ২০২৩-০২-১৪ ০২:৫০:২৩

মুহিব আজাদ: ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ, যে করিবে দান/ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই...।’ সত্যি সেই কবে কবি বলে গিয়েছিলেন এই কথা। যুগ যুগ ধরে সেই কথাই যেন বারবার সত্য হয়ে ফিরে এসেছে এই বাংলায়। মানুষের জন্য যারা নিঃশেষে প্রাণ বিলান তাদের কখনও ক্ষয় হয় না। তাদের কেউ শেষ করতে পারে না। মানুষের ভালোবাসায় তারা ফিরে আসেন বারবার।তেমনি এক মানুষ অন্তপ্রাণ ব্যক্তি মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
বর্তমান সময়ে সিলেটের সবচেয়ে আলোচিত নাম।কোন বিশেষণ নামের সঙ্গে জুড়ে দিলে যথার্থ হবে খুঁজে পাওয়া কঠিন, এত বিশাল তার কীর্তি, এত লম্বা তার ক্যারিয়ার। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পাশে শুধু একটা শব্দ -ই যায় 'গণমানুষের নেতা'। হাজার হাজার মানুষের প্রিয় এই নেতাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওসমানীনগর -বিশ্বনাথবাসীর স্বপ্ন ছিল তাঁরমতো জনদরদীকে এমপি হিসেব দেখতে। কিন্তু হঠাৎ সংবাদ এলো আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পক্ষ থেকে নাকি তিনি 'গ্রীন সিগন্যাল' ও পেয়েছেন।
এমন সংবাদে পুরো সিলেটের মানুষ যারপরনাই আনন্দিত।
কবির সেই কথারই প্রমাণ হিসেবে তিনি যেন আবার ফিরে এসেছেন জোড়ালোভাবে আলোচনায়। যখনই যেখানে যেভাবে সুযোগ পেয়েছেন মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মানুষের সেই ভালোবাসা তাকে এখন আরও বৃহত্তর পরিসরে মানুষের সেবায় জন্য যেন ডাকছে। মানুষ এখন জানে তাদের একজন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আছেন। যিনি সুদূর প্রবাসে থাকলেও দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তার এলাকার জন্য মন কাঁদে। ব্যক্তিগতভাবে তাই তিনি নিজ এলাকার মানুষের সেবায় সব সময় নিয়োজিত ছিলেন। এজন্য সহজেই বলা যায় তিনি যদি সরকারের অংশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান তাহলে তার হাত দিয়ে সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা রেেকটের গতিতে এগিয়ে যাবে। কারণ তার নেওয়ার কিছু নেই, তিনি দিতে জানেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে প্রভাবশালী এবং দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং ঘনিষ্ঠ নেতাদের মধ্যে অন্যতম। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার ঘনিষ্ঠতা দেখেছে পুরো দেশ। বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপ সিদ্দিকী বাংলাদেশে একটি লেটস টকে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রশংসা করেন, বলেন সিলেটের আনোয়ার মামা আমার নির্বাচনের সময় অনেক কাজ করেছেন,মামার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর রয়েছে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কাছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে বর্তমানে তার নাম সিলেট সিটি কর্পোরেশনে শোনা যাওয়ার পর নতুন করে সব আলোচনায় এসেছে।
পরিচয়: সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলার বুরুঙ্গাঁ বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম তিলাপাড়া একটি মনোরম গ্রাম। ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় এই গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে নৌশা মিয়া চৌধুরী এবং মোছা. গহিনুন্নেছা চৌধুরীর ঘর আলো করে জন্ম নেন আনোয়ারুজ্জামান। ১৯৭০ সালের ১লা জুন এই দিনটি ছিল বাবা মায়ের জন্য খুব আনন্দের। তারা ৬ ভাই, এদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান সবার ছোটো। তারা ৬ ভাই-ই যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। বড়ো ভাই হাবিবুর রহমান চৌধুরী সিলেট গণদাবী পরিষদের নেতা ছিলেন, দ্বিতীয় ভাই আওলাদ হোসেন চৌধুরী যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং মাঝেমধ্যে দেশে আসেন ও এলাকার মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। তৃতীয় ভাই আব্দাল হোসেন চৌধুরী ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত। চতুর্থ ভাই আজাদ বক্ত চৌধুরী দেশে ও যুক্তরাজ্যে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা নিউহাম বেঙ্গলী কমিউনিটি ট্রাস্ট (এনবিসিটি) এর কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। তিনি বালাগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট, বালাগঞ্জ সমিতি সহ বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়া তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ যুক্তরাজ্য শাখার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও আওয়ামীলীগের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।তিনি এখন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত। পঞ্চম ভাই মো.আনহারুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। তিনি ১৯৮৪-১৯৮৫ সালের দিকে বুরুঙ্গাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং সেখানে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। জনাব মোঃ আনহারুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যেও শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত এবং যুক্তরাজ্য ও এলাকার শিক্ষা-দীক্ষার উন্নয়নে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর দাদা মরহুম মো.আছলম চৌধুরীর দুই ছেলে ছিলেন। একজন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাবা নৌশা মিয়া চৌধুরী ও চাচা আফরোজ মিয়া চৌধুরী। বাবা ও চাচা দু’জনই যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছিলেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে ছোটো রেখে তার বাবা মারা যান। তার বাবা ও চাচা দু’জনই এলাকার মানুষের কাছে পরোপকারী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা যুক্তরাজ্যে ছিলেন এবং প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের জন্য যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল সেখানে বিভিন্ন সময় তারা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৭৮ সালের দিকে পশ্চিম তিলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, পরে বুরুঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি মৌসুমী সমাজ কল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
৮ম শ্রেণিতে থাকতেই তার রাজনৈতিক চেতনাবোধ জাগ্রত হতে থাকে। সেসময় এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন দানা বাধতে শুরু করে এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন সময় ছাত্র ধর্মঘট, কাস বর্জন ও হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তখন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তার ঘনিষ্ট কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে প্রতিটি কর্মসূচি পালন করতেন। তখন বুরুঙ্গায় ছাত্রলীগের কোন কার্যক্রম ছিল না। নিজ চেতনাবোধ থেকে এসব কর্মসূচি পালন করা হত।
৯ম শ্রেণিতে পড়াকালে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশে হরতাল ডাকা হয়। হরতালের দিন আনোয়ার চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে হাইওয়েতে যাওয়া হয়। বুরুঙ্গা সড়কের মুখে কিছু বখাটে মাস্তান প্রকৃতির লোক পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মিছিলে আগত নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে ও বেশ কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনার খবর তাজপুর থানা আওয়ামীলীগের নেতারা ছুটে আসেন এবং ঘটনার সমাধান করেন। এই ঘটনায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নেতাদের নজরে চলে আসেন। তখন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এম. এ গনি, সাধারণ সম্পাদক ছালেহ আহমদ ও থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ইকবাল আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দাল মিয়া।
পরবর্তীতে বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে মো. আব্দাল মিয়াকে সভাপতি ও আব্দুল মতিনকে সাধারন সম্পাদক করে উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। ঐ কমিটিতে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সমাজসেবা সম্পাদক করা হয়।
১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেট সরকারি কলেজে লেখা পড়া করেন। সেসময় তিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সিলেটের রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে তিনি সিলেট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে যুক্তরাজ্যে চলেন যান। এই যাওয়াটা শুধু দৃশ্যমান কিন্তু মন পড়ে থাকে তার দেশের প্রতি। দেশের মানুষের প্রতি। তাইতো তিনি বিদেশে থাকলেও দেশ ও আওয়ামীলীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। সব সময় সব সুযোগে তিনি থেকেছেন স্বদেশের সাথে, দলের সাথে, এলাকার মানুষের সাথে। আর তাইতো তাকে ঘিরে মানুষের স্বপ্ন এখন ছোট্টো চারাগাছ থেকে এখন বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে।
আধুনিক ও বসবাস উপযোগী ডিজিটাল নগরীর গড়ার প্রত্যয়ে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ বর্তমান সরকার। তাই বৃহত্তর সিলেটের কৃতি সন্তান জননেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী পুণ্যভূমি সিলেটের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে সিলেট নগরীকে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। শ্রদ্ধেয় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ভাইয়ের জন্য রইলো নিরন্তর শুভকামনা।
লেখক-মুহিব আজাদ, আয়ারল্যান্ড প্রবাসী।
সিলেট প্রতিদিন/ এমএ

বিজ্ঞাপন স্থান
পুরাতন সংবাদ খুঁজেন
বিজ্ঞাপন স্থান
ফেসবুক মন্তব্য