বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৭ পূর্বাহ্ন

চার্লসের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে কুমিল্লার ইতিহাস গড়া জয়

  • প্রকাশের সময় : ৩১/০১/২০২৩ ১০:৩০:১৩
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
6

শেষ ওভারে সেঞ্চুরির হাতছানি ছিল তামিম-হোপ দুজনেরই। তামিমের লাগত একটি ছক্কা। হোপের ১০ রান। মোসাদ্দেকের করা প্রথম বল উড়াতে গিয়ে তামিম ডিপ কভারে ক্যাচ দেন। পরের তিন বল খেলেন নতুন ব্যাটসম্যান আজম খান।

শেষ দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হলেই সেঞ্চুরি পূর্ণ হোপের। কিন্তু পঞ্চম বলে ১ রানের বেশি নিতে পারেননি। তাতে ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন এ ব্যাটসম্যান। তামিম ও হোপের দুটি নব্বই রানের ইনিংসে কুমিল্লার বিপক্ষে ২ উইকেটে ২১০ রান করে খুলনা। যা এবারের আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

ওই রান তাড়া করতে গিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স জবাব দেয় মোহাম্মদ রিজওয়ান ও জনসন চার্লসের ব্যাটে। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে রিজওয়ান শুরুতে এলোমেলো করেন খুলনার বোলিং। সেঞ্চুরিতে ফিনিশিং করেন চার্লস। তার ৫৬ বলে ১০৭ রানের ইনিংসে কুমিল্লা ১০ বল আগে ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয়। যা বিপিএলে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। এর আগে ২০২০ সালে ঢাকা প্লাটুনের করা ২০৫ রানের জবাবে খুলনা টাইগার্স ২ উইকেটে করেছিল ২০৭ রান। 

চার্লসের এটি বিপিএলে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ২০১৭ সালে রংপুর রাইডার্সের হয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ১০৫ রান করেছিলেন। আজকের ইনিংসটি ছিল বেশ সাজানো গোছানো। প্রথম ৩১ বলে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৩৪ রান। পরের ২২ বলে ক্যারিবীয়ান ক্রিকেটার তোলেন ৬৬ রান।

দুই ওভারেই পাল্টে যায় তার রান। পেসার আহমেদ বাটের ১৩তম ওভারে ২২ ও নাহিদুলের ১৫তম ওভারে ২৪ রান তোলেন। ২৭ বলে সেঞ্চুরি পাওয়া চার্লস সেঞ্চুরি তোলেন ৫৩ বলে। সব মিলিয়ে ৫৬ বলে ১০৭ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫ চার ও ১১ ছক্কায়।

মাঠে নামার আগেই খুলনা দলে চমক। হঠাৎ অধিনায়ক বদল। ইয়াসির আলী রাব্বাীর জায়গায় টস করতে নেমেছেন শাই হোপ। ইয়াসির একাদশে খেললেও হোপকে কেন অধিনায়ক করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেননি দলের ম্যানেজার।

কুমিল্লার আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে খুলনার শুরুটাও ভালো হয়নি। ওপেনিংয়ে ফেরা মাহমুদুল হাসান জয় ৫ বলে ১ রান করে নাসিম শাহর বলে এলবিডব্লিউ হন। এরপর খুলনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৮৪ রানের জুটি গড়ে ম্যাচটা কুমিল্লার থেকে ছিনিয়ে নিতে থাকেন তামিম ও হোপ।

তামিম থিতু হতে সময় নিয়েছিলেন। ফিফটি করেছিলেন ৪৫ বলে। যা তার বিপিএলের ৫০তম ফিফটি। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০তম ফিফটির কীর্তি গড়েন এ ব্যাটসম্যান। এরপর তাকে আর থামানো যায়নি। শেষ ওভারে মোসাদ্দেকের বলে ৯৫ রানে আউট হন। ৬১ বলে ১১ চার ও ৪ ছক্কায় এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি সাজান।

তামিম আউট হলেও হোপ টিকে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। ৫৫ বলে ৫ চার ও ৭ ছক্কায় ৯১ রান করেন। ২৭ বলে ফিফটি করা হোপ পরের দিকে একটু মন্থর হয়ে পড়েন। নয়তো সেঞ্চুরিটা পেয়েও যেতে পারতেন। শেষ দিকে কেবল ৪ বল খেলার সুযোগ মিলেছিল আজম খানের। ওই ৪ বলে ১টি করে চার ও ছক্কায় ১২ রান তুলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন উইকেট কিপার এ ব্যাটসম্যান।

কুমিল্লার হয়ে বল হাতে ১টি করে উইকেট নেন নাসিম শাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কুমিল্লা শুরুতেই বিপদে পড়ে। শফিকুল ইসলামের বলে চার মেরে ব্যাটিং শুরু করা লিটন পরের বলে হাতে আঘাত পান। বাঁহাতি পেসারের ভেতরে ঢোকানো বল মিস করেন এ ব্যাটসম্যান। অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়েন কুমিল্লার ওপেনার। তিনে নামা অধিনায়ক ইমরুল ৩ বলে ৫ রানের বেশি করতে পারেননি। শফিকুলের বলেই ক্যাচ দেন পয়েন্টে।

খুলনা দ্বিতীয় উইকেটে রান ফোয়ারা ছুটিয়েছিল। কুমিল্লা প্রতিরোধ গড়ে তৃতীয় উইকেটে। মোহাম্মদ রিজওয়ান ও জনসন চার্লস প্রতি আক্রমণে গিয়ে এলোমেলো করে দেন খুলনার বোলিং। প্রায় প্রতি ওভারেই একটি করে বাউন্ডারি ছিল তাদের জুটিতে। কোনো কোনো ওভারে চার-ছক্কায় শাসন করেন দুই ব্যাটসম্যান। পাওয়ার প্লে’তে তাদের রান ছিল ৫৩। ১০ ওভারে ৯৯। এ সময়ে রিজওয়ান ৪টি করে চার ও ছক্কায় মাত্র ২৪ বলে তুলে নেন ফিফটি। চার্লসের ফিফটি আসে ৩৫ বলে। আহমেদ বাটের করা ১৩তম ওভার থেকে ২২ রান তোলেন এ ব্যাটসম্যান।

ভয়ংকর এ জুটি ভাঙেন স্পিনার নাসুম। বাঁহাতি স্পিনারকে এগিয়ে কভার দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে কভারে ক্যাচ দেন ৩৯ বলে ৭৩ রান করা রিজওয়ান। তৃতীয় উইকেটে রিজওয়ান ও চার্লসের জুটিতে এসেছিল ৬৯ বলে ১২২ রান। সঙ্গী হারানোর পর চার্লস আরো তেতে উঠেন। স্পিনার নাহিদুলের করা ১৫তম ওভারে চার ছ্ক্কা হাঁকান চোখের পলকে। প্রতিটি বল, প্রতিটি শট যেন রিপ্লে হচ্ছিল।

এরপর আর তাকে থামানো যায়নি। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি তুলে ডানহাতি ব্যাটসম্যান কুমিল্লাকে দেন জয়ের স্বাদ। চার-ছক্কার বৃষ্টি নামিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। বিপিএলে এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। এর আগে উসমান খান, আজম খান ও ইফতেখার আহমেদ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। ঢাকা, চট্টগ্রামের পর সিলেটেও দেখা মিলল সেঞ্চুরির। সিলেট পর্বের শেষটা রান উৎসবে হলো। তাইতো গ্যালারিতেও হলো আনন্দোৎসব।


সিলেট প্রতিদিন / এমএনআই


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি