
বাজারদর বিবেচনায় ভাড়া বৃদ্ধির অনুরোধ শাবির অটোরিক্সা চালকদের

দেলোয়ার হোসেন, শাবিপ্রবি
প্রকাশ ২০২২-১২-০৪ ০৪:০৯:২৪

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের দুইটি আবাসিক হলে এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে থাকা ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা ব্যবহার করে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মূল ফটক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে যে কোনো জায়গায় যাতায়াত করার জন্য আজ থেকে একযুগ আগে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় জনপ্রতি ৫ টাকা। সেই যাতায়াত ফি এখনও বহাল আছে। তবে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই ভাড়ার টাকায় সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন বলে জানান চালকেরা।
রোববার দুপুরে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অটো স্ট্যান্ডে মোট ৪৯টি অটোরিক্সা(ব্যাটারি চালিত) যাত্রী পারাপার করে থাকেন।তারমধ্যে ৪৭টি বর্তমানে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আর বাকি দুটি সংস্কারের জন্য ওয়ার্কশপে রয়েছে।এসব অটোরিক্সা ক্রমান্বয়ে সিরিয়াল অনুযায়ী একটির পর আরেকটি যাত্রী বহন করে থাকে।এসব অটোরিক্সার যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী, তাঁদের পরিবার পরিজন অথবা বহিরাগত দর্শনার্থী।যেসব চালক ভাড়া নিয়ে অটোরিক্সা চালিয়ে থাকেন তাঁরা দৈনিক রিক্সার মালিককে অটোপ্রতি ৩০০টাকা ভাড়া ও ১৮০টাকা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়। এই ৪০০টাকা পরিশোধ করার পর যা অববিষ্ট থাকে তা দিয়েই সংসার চালাতে হয় তাঁদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে ক্যাম্পাসের যে স্থানেই যাত্রী নামুক চালক ভাড়া পান জনপ্রতি পাঁচ টাকা। কেউ কেউ আবার মানবিক বিবেচনায় দশটাকাও দিয়ে থাকেন। তবে এই দৃশ্য সবার ক্ষেত্রে ঘটে না। প্রধান ফটক থেকে সবচেয়ে বেশি দূরত্বে অবস্থিত সৈয়দ মুজতবা আলী হল। সেখানে অটো স্ট্যান্ড থাকলেও যাত্রীর উপর নির্ভর করে অটোরিক্সা যাওয়া আসা করে। কিন্তু এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় না। অটোরিক্সা চালকদের দাবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাড়া মাত্র ৫ টাকা পেয়ে থাকেন তাঁরা। এছাড়া কেউ যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে গিয়ে থাকেন তাহলে খুশি হয়ে ৫টাকা বেশি ভাড়া প্রদান করে থাকেন।
ভিন্ন চিত্র দেখা যায় সাধারণ রিক্সার ক্ষেত্রে(পায়ে চালিত)।এইসব রিক্সায় প্রধান ফটক থেকে ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে একজন আসা যাওয়া করলে সর্বনিম্ন দশটাকা, দুইজন সর্বনিম্ন ১৫টাকা পরিশোধ করতে হয়। তবে সেক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে চালকদের আবদার ৫০টাকা কিংবা ১০০টাকাও ছাড়িয়ে যায়। এই রিক্সায় ছেলেদের শাহপরান হলে আসলে সর্বনিম্ন ২৫ টাকা থেকে ৫০টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয় চালককে। রাতে ভাড়ার পরিমাণ জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়।
দাম বৃদ্ধির আরেকটি ভিন্ন চিত্র দেখা যায় চা ও পিঠা বিক্রির ক্ষেত্রে। গত বছর ক্যাম্পাসের টং গুলোতে দুধ-চা ও রং-চা ৫ টাকা ধরে বিক্রি হলেও বর্তমানে দুধ চায়ের দাম ২ টাকা বৃদ্ধি করে ৭টাকা দামে বিক্রি করা হয়। এই চিত্র শীতের পিঠার ক্ষেত্রেও বিদ্যমান।
বিশ্ববিদালয়ে গত ১৫ বছর ধরে অটোরিক্সা চালাচ্ছেন বিশ্ববিদালয়ের পাশ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা নোমান মিয়া। পাঁচ সদস্যের পরিবারে তার একমাত্র উপার্জনের উৎস এই অটোরিক্সা। তাও এটি ভাড়ায় চালিত। প্রতিদিন ৪৮০টাকা অটো মালিককে পরিশোধ করতে হয় তাঁর। প্রতিদিনের উপার্জন থেকে .৪৮০টাকা দেওয়ার পরে অবশিষ্ট যা থাকে তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। এই টাকায় আবার সন্তানদের পড়াশোনার খরচও চলে।
নোমান মিয়া বলেন, ‘অনেক বছর থেকেই মাত্র ৫টাকা ভাড়ায় গাড়ি চালাই আমরা। যদি এই ভাড়ার পরিমাণটা আরেকটু বৃদ্ধি করা যায় তাহলে আমাদের জন্য ভাল হয়। সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের সাধারণ মানুষদের নিয়ে কথা বলে। সাধারণ মানুষদের জন্য কাজ করে। তাই বর্তমান বাজারদর বিবেচনা করে আমাদের দিকটাও যদি তারা একটু ভাবেন তাহলে আমাদের পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরে আসবে।’
বিশ্ববিদালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, সব কিছু দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অটোচালকদের ভাড়া একটু বাড়ানো যায়। তবে কারো কাছে ভাংতি না থাকলে যেন চালকরা কারো সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করে সে বিষয়েও সতর্ক থাকা দরকার। রিক্সা দিয়ে গেলে আমাদের ১০টাকার উপরে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে অটোরিক্সা ভাড়া বৃদ্ধিতে বিবেচনা করা দরকার।
একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি অখন এই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ছিলাম তখন ৫টাকা দিয়েই যাতায়াত করতাম। তবে এখন মাঝেমাঝে রিজার্ভ নিয়ে যাই। সেক্ষেতে সম্পূর্ণ ভাড়ার অধিক পরিশোধ করি।এছাড়া অন্যদের সঙ্গে গেলেও ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। যেহেতু সব কিছুর দাম বাড়া। তাই তাঁদের দিকটাও বিবেচনা করা যায়। তবে সেটা যেন শিক্ষার্থীবান্দব হয়’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ জাভেদ কায়সার ইবনে রহমান বলেন, ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে অনেক দিন আগ থেকেই অটোচালকরা আবেদন করে যাচ্ছে।যেহেতু নিত্য পণ্যের দাম বেড়েছে সেহেতু তাঁদের ভাড়া বৃদ্ধিও বিবেচনা করা দরকার। এখন আমাদের এটা ভাবতে হবে যে, এমন একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে যাতে শিক্ষার্থী বা অটোচালক কেউই অসন্তুষ্ট না হয়।
সিলেট প্রতিদিন/ এমএ

বিজ্ঞাপন স্থান
পুরাতন সংবাদ খুঁজেন
বিজ্ঞাপন স্থান
ফেসবুক মন্তব্য