
সমাজে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার

প্রতিদিন ডেস্ক
প্রকাশ ২০২২-১০-১৩ ১০:২৩:৫১

নাজমিন চৌধুরী হিয়া
‘আল্লাহকে যে পাইতে চাই
হযরতকে ভালোবেসে’
যদি আমরা শুধু সৃষ্টিকর্তাকে মহব্বত করি বলি, সেই মহব্বতে পূর্নতা কখনো আসবেনা যতক্ষণ না আমরা রাসুল (সাঃ)কে মহব্বত করবো। ঠিক তেমনি রাসুল (সাঃ) বলেছেন নবী রাসুলগনের উত্তরসূরী হলেন আলেম ওলমা। এলেম ছাড়া তো আর কে আলেম হতে পারে না আর আলেম ছাড়া কেউ ওলি আউলিয়াও হতে পারেনা। অতএব নিঃসন্দেহে ওলি-আউলিয়াগণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা। আর আল্লাহর পছন্দনীয় কোন বিষয় দিয়ে উছিলা করা জায়েজ আছে।কিন্তু আমাদেরকে এটা বুঝতে হবে এই উছিলা অতিরঞ্জিত হয়ে যাচ্ছে কি না।
আমি কিছুদিন আগে আমাদের সিলেটের মাজারসমূহে গিয়েছিলাম। মহিলা এবাদতখানায় নফল নামাজ পরলাম তসবিহসমূহ পরলাম এবং মোনাজাত করলাম। সেই মোনাজাতে ওলির উছিলা দিলাম এইভাবে যে, ‘হে আল্লাহ আমি এক গুনাহগার বান্দা, আমার এবাদত আপনার কাছে পছন্দনীয় কি না আমি জানি না কিন্তু আমি এটা জানি অমুক ওলিগন আপনার প্রিয় বান্দা ছিলেন এবং আপনি তাদেরকে এই জায়গায় চির শায়িত করেছেন। এর মানে এই জায়গাও আপনার কাছে পছন্দনীয় অতএব হে আমার মালিক আপনি আপনার প্রিয় বান্দা এবং এই জায়গার উছিলায় আমার দোআ কবুল করার আর্তনাদ জানালাম’। এ রকম করে দোআ শেষ করলাম। তারপর লক্ষ্য করে দেখলাম, অধিকাংশ মানুষই শিরকে লিপ্ত বিশেষ করে মহিলাগণ। তারা মাজারের এক পার্শে মোমবাতি জ্বালাচ্ছে এবং সেজদা করতেছে ওই মোমবাতির সামনে। আমরা সব মুসলমানরা অবগত যে, এক আল্লাহ ব্যাতিত কারো সেজদা করা মানে সরাসরি শিরক। আর এই শিরক কোনো ছোট বিষয় নয়। আমি প্রথমেই বলেছি ওলি-আউলিয়াগণ আল্লাহর প্রিয় বান্দা তাদের প্রতি আমাদের আবেগ অনূভুতি, সম্মান থাকাটা সাভাবিক এবং তাদের জীবনে রয়েছে আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয়। এর মানে এই নয় আমরা তাঁদেরকে সেজদা করবো আর না এমন কোনো কিছু তাঁরা শিখিয়ে গেছেন। একদল আছে যারা তাদের ফায়দার জন্য সাধারণ মানুষকে পথভ্রষ্ট করছে। যাই হউক, আমি ওই মহিলাদেরকে এসব করতে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। আমার তখন ইচ্ছে হয়েছিল ওদেরকে জিজ্ঞেস করতে আপনারা কি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরেন? কারণ ওরা যদি নামাজ সম্পর্কে জানতো তাহলে কোনদিনও এরকম মোমবাতি জ্বালিয়ে পাথরের উপর সেজদা করে বলতো না, হে বাবা তোমার কাছে এসেছি খালি হাতে ফিরাইও না।তোমার নামে জীবন কোরবান, তোমার নামে মান্নত করে গরু, ছাগল ইত্যাদি এনেছি। এসব শিরক থেকে আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুক আমিন। তারপর ওদেরকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না কারন তাদেরকে এতটাই আবেগি হতে দেখলাম যদি কিছু বলতে যেতাম উল্টা রিয়েকসনের শিকার হতাম। অতঃপর আমার সেই আয়াতের কথা মনে হয়ে গেল ‘আল্লাহ তাদের অন্তরে এবং তাদের কানে মোহর লাগিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের চোখ সমূহে রয়েছে পর্দা। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা আজাব" (সূরা বাকারাঃ আয়াত নং ৭)
তাই আমি কিছু না বলে মহান আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোআ চাইলাম আর সেখান থেকে প্রস্থান করলাম। আমার অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু বলতে পারি না কারন কে গ্রহণ করবে আমার আদেশ-উপদেশ বা যুক্তিকথা। আমার তো আর ডিগ্রি বা কোনো খেতাব নেই। তবে যার ডিগ্রি বা খেতাব আছে তাকে অনেক শিক্ষিত বলা যায় জ্ঞানী না। জ্ঞান হলো আল্লাহর দান। তবে শিক্ষাকে আমি এখানে ছোট করে বলছি না, মোমবাতি যদি হয় জ্ঞান সেই মোমবাতির আলো টা হলো শিক্ষা। দুটোই একটি ছাড়া আরেকটি অপূর্ণ। তবে শিক্ষিত তো হলাম কিন্তু সেই শিক্ষা শুধু অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য, সেই শিক্ষিত ব্যাক্তি আর যাই হউক সমাজের জন্য তার ধারা কোনো কল্যাণ হবে না। আবার জ্ঞান তো ঠিকি আছে কিন্তু সেই জ্ঞান সে মানুষের কল্যানে প্রচার করল না তার মতো দরিদ্র আর কেউ নেই। কারন মানুষের কল্যানে জ্ঞান প্রচার করাও সদকাহে জারিয়ার মতো। তাই আমার মতে সমাজের উচ্চ শিক্ষিত জ্ঞানী ব্যাক্তিরা সামাজিক ভাবেই হউক আর ধর্মীয় ভাবেই হউক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারন এটা কোন সাধারণ বিষয় না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ইসলামের নিয়ম কানুন বিকৃত হয়ে পৌছাবে তাদের কারনে যারা মুসলমান তো ঠিকি কিন্তু সরাসরি শিরকে লিপ্ত। কোনো দাংগা, হাংগামা করে নয় তাদেরকে দাওয়াতের মাধ্যমে ভালোবাসার মাধ্যমে বলতে হবে। ইসলামের সঠিক প্রচারণা বাড়াতে হবে। তাদের কাছে এই প্রশ্ন পৌছাতে হবে যে তারা যার সেজদা বা যার নামে মান্নত করতেছে তাঁর সঠিক জীবন কাহিনি সম্পর্কে তারা কতটুকু জানে। কোনো ওলি-আউলিয়াদের জীবনে এমন কোনো কিছু খুঁজে পাবে না যে তাঁরা বলেছেন আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কাউকে সেজদা করা বা কারো কাছে মান্নত করে চাওয়া। তাহলে বুঝতে পারবে তারা কতটা মারাত্মক গুনাহে আছে যে গুনাহের কোনো ক্ষমা নেই।
মনে রাখবেন দেশে আজাব আর গজব আসার জন্য একজন ব্যাক্তিই যথেষ্ট। তবে এর দায়বার সমাজে জ্ঞানী গুনী ব্যাক্তিদের উপরও বর্তাবে। আমি একটি ইসলামিক বইয়ে পড়েছিলাম, একটি জাহাজের সাথে তুলনা করা যাক আমাদের সমাজকে৷ ধরুন জাহাজটা দুইতলা। উপরের তলায় যারা থাকেন তারা বিশিষ্ট ব্যাক্তি। নিচতলা থাকেন সাধারণ মানুষ। নিচতলার মানুষ খাবার পানি আনতে হলে উপরের তলায় যেতে হয় আর এতে করে তাদের অনেক কষ্ট হয়। একদিন জাহাজের নিচতলার মানুষ সিদ্ধান্ত নিলো জাহাজের কিছু অংশ ফুটো করে দিবে এতে করে তারা সহজেই পানি পেয়ে যাবে। অথচ উপরের তলার মানুষ চাইলেই তাদেরকে সাহায্যেও করতে পারতো এবং জাহাজ ফুটো করতে বাঁধাও দিতে পারতো। কিন্তু তা তারা করেনি। তারা ভেবেছিলো আমরা তো উপরের তলার মানুষ আমাদের কোনো সমস্যা নেই। অতঃপর একদিন এই ফুটো দিয়ে পানি ঢুকতে ঢুকতে জাহাজটাই ডুবে গেল!
সমাজে যেমন ভালো মানুষ আছেন তেমনি নানান অপকর্মে জড়িত খারাপ মানুষও আছে। কিন্তু আমি যা দেখলাম মাজারে মাজারে মুসলমান নারী ও পুরুষ সরাসরি শিরকে লিপ্ত অথচ তারা এটাকেই সঠিক মনে করে। তাই আমি মনে করি এই বিষয়ে সবাইকেই সতর্ক হওয়া উচিত সেই সাথে পদক্ষেপ নেওয়া।
সিলেট প্রতিদিন/ এমএনআই

বিজ্ঞাপন স্থান
পুরাতন সংবাদ খুঁজেন
বিজ্ঞাপন স্থান
ফেসবুক মন্তব্য