শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিশ্ববিদ্যালয়ের নিউজিল্যান্ড সহ আশপাশের এলাকায় আলোর ব্যবস্থা প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গতকাল মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিউজিল্যান্ড এলাকার একটি টিলার উপর একটি সৌর বিদ্যুৎ বিশিষ্ট বাতি স্থাপন করা হয়েছে।
খুটিটির ঠিক দশফুট দূরেই বুলবুলকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ড ঘটার জায়গাটি এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টানানো ক্রাইমসিনের দড়িতে চিহ্নিত করা আছে।
এছাড়া গাজিকালো টিলা লাগোয়া যেসব এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় সীমানাপ্রাচীরের তারকাঁটা ও প্রাচীরের নিচের মাটিয়ে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল তা আজ পুনরায় সংস্কার করা হয়।
শিক্ষার্থীরা জানায়, নিউজিল্যান্ড নামক এই টিলায় সন্ধ্যার পর বাতির ব্যবস্থা না থাকায় ছিনতাই এর মত ঘটনা ঘটে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) নাজিম উদ্দিন জানায়, নিউজিল্যান্ড এলাকাটির পাশ্ববর্তী হচ্ছে সিরাজুন্নেসা হল। টিলাসহ ওইসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে বাতির ব্যবস্থা করতে হলে আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে। আর ওই এলালায় কেমন বাতি প্রয়োজন, কতটি লাগবে, তার রক্ষণাবেক্ষণ সহ সব কিছু মিলিয়ে একটা দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া এটি। তাই দ্রুতসময়ে ওই এলাকায় আলোর ব্যবস্থা করতে সেখানে সৌর বিদ্যুতের বাতি স্থাপন করা হচ্ছে।
তিনি জানান, কাল পরীক্ষামূলকভাবে ২৫ ওয়াটের একটি সৌরবাতি স্থাপন করেছি। সন্ধ্যা থেকে এটি জ্বলতে শুরু করেছে। আমরা সেখানে গিয়েছি। এর আলো কতদূর বিস্তৃত হয় তার উপর ভিত্তি করে ওই এলাকায় মোট কতটি বাতি লাগবে তার হিসেব নিয়ে এসেছি। এরপর আমরা প্রকৌশল দপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখা হতে পরবর্তী পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বিবরণী দাখিল করে দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করব।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বিকল হওয়া ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি), ফাইবার অপটিক কেব্ল ও যন্ত্রাংশ মেরামতের কাজ করতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ হাবিবুর রহমান বলেন, নিউজিল্যান্ড এ বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন করতে হলে পুরো প্রক্রিয়ার জন্য সময় লাগবে। তাই ওই এলাকায় দ্রুত সময়ে আলোর ব্যবস্থা করতে আমরা সৌর বিদ্যুতের বাতি স্থাপন করেছি। প্রথম দিকে পরীক্ষামূলকভাবে একটি বাতি জ্বালিয়ে দেখেছি এর বিস্তৃতি কতটুকো জায়গা নিয়ে থাকে। তা থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারবো ওই এলাকায় মোট কয়টি বাতি লাগবে। পর্যবেক্ষণ শেষে আমরা বাকি কাজের প্রক্রিয়া শুরু করবো।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে গাজী-কালু টিলা লাগোয়া ‘নিউজিল্যান্ড’ এলাকায় এক ছাত্রীসহ ঘুরতে গিয়েছিলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. বুলবুল আহমেদ। ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি ছুরিকাহত হন। পরে তাঁকে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রাতেই সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানায় হত্যা মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন।
মামলার পরপরই পুলিশ গত ২৫ ও ২৬ জুলাই তিন ছিনতাইকারীকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে। তাঁদের মধ্যে আবুল হোসেনের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২৭ জুলাই কামরুল ও হাসানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নিহত বুলবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তাঁর বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার নন্দীপাড়া গ্রামে। তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা দোষীদের বিচার ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবিতে একাধিক কর্মসূচি পালন করেন।
সর্বশেষ গত রোববার বুলবুলের মা, ভাই, দুই বোনসহ পরিবারের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বুলবুলের ব্যবহৃত জিনিস নিয়ে যান। এ সময় তাঁরা গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, কেবল ছিনতাইয়ের জন্য বুলবুল এমন নৃশংসভাবে খুন হতে পারেন না। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেটা অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বের করা হোক।