শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৪ অপরাহ্ন

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর স্বপ্নযাত্রা, খুলল দক্ষিণের দুয়ার

  • প্রকাশের সময় : ২৫/০৬/২০২২ ১২:২৮:৪৬
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
3



দেশের বৃহত্তম যোগাযোগ অবকাঠামো স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো স্বপ্নের সেতুর স্বপ্নযাত্রা, খুলল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগের দুয়ার।


আজ শনিবার বেলা ১২টায় প্রমত্তা পদ্মার বুকে বাঙালির গর্ব ও অহঙ্কারের প্রতীক, বহু কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

 

এর আগে সেতুর উদ্বোধন করতে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে তিনি হেলিকপ্টারে করে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান। সেখানে বেলা পৌনে ১১টায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন। ভাষণের পর তিনি সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকেটের উন্মোচন করেন।


পরে সেতুর উদ্বোধন চত্বরের দিকে যাত্রা করেন। এ সময় টোলপ্লাজায় তিনি তার গাড়ির টোল পরিশোধ করেন। পরে সেতুর উদ্বোধন মঞ্চে পৌঁছে দেশ ও জাতির জন্য দোয়া করেন। দোয়া শেষে সেতুর উদ্বোধন ফলক উন্মোচন করেন। এর মাধ্যমে খুলে গেল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অপরাপর অংশের সংযোগ, যোগাযোগ ও সম্ভাবনার অনন্ত দুয়ার। 


ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মঞ্চে আসেন তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। আরও আসেন পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর পদত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও মোশাররফ হোসেন ভূঁইঞা। 


উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনা সমবেত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে স্লোগান দেন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। সমাবেশস্থলে আসা নেতাকর্মীরা এ সময় সমস্বরে সেই স্লোগানে কণ্ঠ মেলান। এরপর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদকে নিয়ে ফলক মঞ্চে ছবি তুলেন প্রধানমন্ত্রী।


পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচনের পর প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে রওনা হন। পথিমধ্যে তার গাড়িবহর থেমে যায় সেতু। তখন বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল আকাশে বর্ণিল মহড়া করে। প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে সেই মহড়া উপভোগ করেন।


প্রমত্তা পদ্মার বুকে পদ্মা সেতু বাঙালির অহঙ্কার, গর্ব ও সক্ষমতা- মর্যাদার প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 


শনিবার সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। তার সঙ্গে মঞ্চে আসীন হন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আরও আসীন হন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।


এর আগে উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটি কোটি দেশবাসীর সঙ্গে আমিও আজ আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে আজ বহু কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। 


‘এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা, আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ। সাবাস বাংলাদেশ, আমরা মাথা নোয়াবো না। আমরা মাথা নোয়াইনি।’ –যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের ফলে আমাদের সেতু নির্মাণ খানিকটা বিলম্বিত হয়েছে, কিন্তু আমরা হতোদ্দম হইনি। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪১টি স্প্যান যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ 'দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।’


পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরবর্তীতে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সরে আসায় গোটা জাতিকে যে অপমান করা হয়েছিল; নিজস্ব অর্থায়নে প্রমত্তা পদ্মার বুকে সেই সেতু নির্মাণ করে অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 


শনিবার সকালে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী আয়োজনে তিনি এই মন্তব্য করেন।   


শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধসে পড়েনি। বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে আমরা প্রমাণ করেছি, 'আমরাও পারি।' পদ্মা সেতু তাই আত্মমর্যাদা ও বাঙালির সক্ষমতা প্রমাণের সেতু শুধু নয়, পুরো জাতিকে অপমান করার প্রতিশোধও। বাংলাদেশের জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা।’


শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ আমি শুধু প্রার্থনা করব, ষড়যন্ত্রকারীদের যেন শুভবুদ্ধির উদয় হয়। সাধারণ জনগণের ভাগ্য নিয়ে যেন তারা আর কোনোদিন ছিনিমিনি না খেলতে পারে।’


শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের শুরুতে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা বলেন।


তিনি বলেন, এই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা পর্যায়ে চক্রান্তকারীদের মিথ্যা ষড়যন্ত্রের কারণে তার ছোট বোন শেখ রেহানা, তার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, শেখ হাসিনার দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তার সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক যোগাযোগ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ কয়েকজন সহকর্মী চরম মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছিলেন।


শেখ হাসিনা তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানান।



পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 


তিনি বলেন, ‘এ সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে এবং প্রতি বছর দশমিক আট-চার শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসন হবে।’


শনিবার সকালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।


তিনি বলেন, বহুমুখী এই সেতুর উপরের ডেক দিয়ে যানবাহন এবং নিচের ডেক দিয়ে চলাচল করবে ট্রেন। সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এর ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একদিকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হবে, অন্যদিকে অর্থনীতি হবে বেগবান। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হবে। 


সিলেট প্রতিদিন / এসএ


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি