শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৮ পূর্বাহ্ন

কুলাউড়ায় বন্যায় দুর্ভোগ: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, আশ্রয় কেন্দ্রে বাড়ছে ভিড়

  • প্রকাশের সময় : ২০/০৬/২০২২ ০৬:২৬:০৬
এই শীতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের
Share
4

ইয়াসিনুর রহমান নাঈম, কুলাউড়া: চারদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় ভাসছে কুলাউড়া। কন্টিনালা, ফানাই, গোগালী নদীতে প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে। আর এসব নদীর পানির গন্তব্যস্থল হাকালুকি হাওরেও অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কুলাউড়া পৌর শহরসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। হাকালুকি তীরবর্তী ভূকশিমইল ইউনিয়নের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ইউনিয়নের সবকটি গ্রামই এখন পানিবন্দি।

এদিকে, মনু নদীর পানি ক্রমশই বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় আছেন মনু তীরের কুলাউড়া অংশের তিন ইউনিয়নসহ পাঁচটি ইউনিয়নের লাখো মানুষ। মনু নদীতে ভাঙ্গন দিলে পুরো কুলাউড়া উপজেলা প্লাবিত হবে। এই আতংকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কুলাউড়াবাসী।

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা ইতোমধ্যে ৩৫ টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছেন। পানিবন্দি লোকজন গবাদিপশুসহ এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন। প্রতিদিনই আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের ভীড় বাড়ছে। ইতোমধ্যে এসব কেন্দ্রে হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানি হাওর তীরবর্তী কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ৪০টি এবং পৌর এলাকার ৮-১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উপজেলার ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে। উপজেলা পরিষদ ভবনের নিচতলায় পানি প্রবেশ করায় দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বেশ কয়েকটি কার্যালয়ের। সদর হাসপাতালে পানি প্রবেশ করায় ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। প্রধান বাজার বাদশাগঞ্জ হাটুপানিতে নিমজ্জিত। পৌরসভার বৃহৎ আবাসিক এলাকা মাগুরা, টিটিডিসি এরিয়া, আহমদাবাদ সাদেকপুর, বিহালা, সোনাপুর, শহর তীরবর্তী উত্তর কুলাউড়া, বিছরাকান্দি, দেখিয়ারপুর গ্রামের শতশত পরিবার পানিবন্দি। অনেক বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ বিকল হওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই। উত্তর বাজার থেকে টিটিডিসি এলাকাসহ বিভিন্ন অফিস আদালতে এবং বাসাবাড়িতে যাতায়াতের জন্য নৌকা ও ভ্যানগাড়ি প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহার করছেন মানুষজন।


সরেজমিন দেখা যায়, হাকালুকি হাওর তীরবর্তী উপজেলার কাদিপুর-ভূকশিমইল-বরমচাল আঞ্চলিক সড়ক, পুষাইনগর-নবাবগঞ্জ সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে দুই থেকে তিন ফুট পানি। এসব এলাকার বেশিরভাগ বাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন মানুষ। ঘরের ভিতর পানি প্রবেশ করায় অনেকেই বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও অন্যত্র আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে নিজেদের একমাত্র সম্বল গরু-ছাগল, হাঁস-মোরগ নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন নিরাপদ স্থানে। রোববার বিকেল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। 

ফানাই নদী ও গোগালী নদীতে পাহাড়ি ঢলে নদী উপচে পানি ওঠায় কৃষি জমি এবং শত শত মানুষের বাড়ি প্লাবিত হয়ে গেছে। শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় লোকজন বাঁধ মেরামত করলে রাতে আবার পানির স্রোতে বাঁধ ভেঙে ফের প্লাবিত হয় এলাকাগুলো। বন্যার পানিতে উপজেলার সাড়ে তিন হাজার হেক্টর ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।


ভৈরবগঞ্জ বাজার শেড ঘর আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা সাদিপুর গ্রামের রিকশা চালক সালাম মিয়ার স্ত্রী শিপ্পি বেগম বলেন, সাদিপুর এলাকার হাওর তীরে আমার ঘর ছিল। কিন্তু হঠাৎ হাওরে পানি বাড়ায় আমরা দুই দিন থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছি। একই গ্রামের বদল মিয়ার স্ত্রী বকুল বিবি (৬২) বলেন, বন্যার পানিতে আমার বাড়িতে কোমর পানি। ৪ ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে এখন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছি। সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা পেয়েছি।

ভূকশিমইল স্কুল এন্ড কলেজ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা আকমল হোসেন (৬৩) বলেন, আমি দিনমজুর মানুষ। কোনমতে সংসার চালাই। হঠাৎ বন্যার পানি বাড়ায় এই আশ্রয় কেন্দ্রে ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে নিয়ে উঠেছি। সাথে আমার ৩টি গবাদিপশুও এই আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। একই সাথে মিনা বেগম (৩৬) বলেন, ছোট্ট দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে  আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে এসেছি। সাথে দুটি গরু নিয়ে এসেছি। এগুলোই আমাদের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পেয়েছি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইফতেখায়ের হোসেন ভুঞাঁ বলেন, উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় রোববার পর্যন্ত ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। পানি বাড়লে আরো ঝুঁকিপূর্ণ অনেক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হতে পারে। অনেক বিদ্যালয়ের দুই তলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আমাদের কার্যালয়ে শনিবার থেকে পানি ঢুকে যাওয়ায় অন্যত্র অস্থায়ীভাবে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাচ্ছি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার বলেন, উপজেলার ১০ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, ১২শত প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ চলমান রয়েছে। ৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এসেছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তবে পানি বেড়েই চলছে। যেসব এলাকায় বেশি পানি সেখানে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা এড়াতে ওই সব কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক স্যার মীর নাহিদ আহসান সার্বক্ষণিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।


সিলেট প্রতিদিন / এমএনআই


Local Ad Space
কমেন্ট বক্স
© All rights reserved © সিলেট প্রতিদিন ২৪
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি